২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ

বিনা নোটিশে তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছাটাই

কক্সবাজার মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়ায় প্রায় সাড়ে ৭ বছর প্রভাষক পদে চাকুরি করেছেন আজিজুল ইসলাম। ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের শিক্ষক তিনি। পাঠদানে রয়েছে তার যথেষ্ট সুনাম। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই মাদ্রাসায় যেতে নিষেধ করেন অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাত হোসেন।

আজিজুল ইসলামকে অফিসে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ধরেন, টাকাগুলো নেন। আপনাকে আর মাদ্রাসায় আসতে হবে না। মাদ্রাসার ফান্ড শূন্য। গেল ১ বছর যে বেতন পাওনা আছেন তাও আপনাকে দেবে না কর্তৃপক্ষ।’
এদিকে, বিনা কারণে চাকরিচ্যুতি, ১ বছরের অধিক সময় বেতনবঞ্চিত করা ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালীর আত্মীয়কে এমপিও পদে নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগি শিক্ষক আজিজুল ইসলাম।
বিষয়টি তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)কে লিখিতভাবে অভিযোগ আকারে জানিয়েছেন।
মৌখিক নির্দেশনায় শিক্ষককে বাদ দেয়ার এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চেয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেই সঙ্গে অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম- দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় তদন্তের দাবি আজিজুল ইসলামের।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবরে দেয়া অভিযোগে শিক্ষক আজিজুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালের ৯ জুলাই মাদ্রাসা এ তৈয়বিয়া তাহেরিয়ায় আলিমের জন্য রাষ্ট্র বিজ্ঞান পদে স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। ১৬ আগষ্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষার জন্য চিঠি দেয় কমিটি। ২০ আগষ্ট নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাতে তিনি প্রথম হন। সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ কমিটির সুপারিশে ২২ আগষ্ট নিয়োগপত্র পেয়ে ১ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন আজিজুল ইসলাম।
২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আনজুমে রহমানিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট তাকে আরো একটি নিয়োগপত্র দেয়।
এরমধ্যে ২ বার শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গত বছর করোনাকালীন সময় ২৮ জানুয়ারি কোন কারণ না ছাড়াই আজিজুল ইসলামের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
করোনার কারণে বেতন বন্ধ বলে অধ্যক্ষ শাহাদাত মৌখিকভাবে জানালেও অপরাপর শিক্ষকগণ ঠিকই বেতন পান।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রভাষক আজিজুল ইসলামকে জরুরি তলব করে অফিসে ডেকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসায় না আসতে বলেন অধ্যক্ষ শাহাদাত হোসেন। সেই সঙ্গে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দানের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
২৬ সেপ্টেম্বর ৩ জন প্রভাষকের জন্য পুনরায় স্থানীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ফান্ড শূন্য বলে পুরো বছর বেতনবঞ্চিত করে পুনরায় নিজের আত্মীয়কে নিয়োগের জন্য বিশাল চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এবং পরিবার পরিজন নিয়ে চরম আর্থিক দুরাবস্থায় দিনাতিপাত করছেন শিক্ষক আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় শুধুমাত্র এ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছি এমপিওভুক্তির আশায়। আমার সরকারি চাকুরীর বয়স শেষ। এমপিওর সময় আমাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিতে কূটকৌশল করা হচ্ছে।

আজিজুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, আমি ১ বছরের বেতন না পেলেও সমস্যা নেই। কিন্তু চাকুরীচ্যুত করলে এ বয়সে যাব কোথায়? খাবো কি? আমার অপরাধ কোথায়? আমি কি প্রতিষ্ঠানের কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি?
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে জুলুম অবিচারের তদন্ত চাই। অধ্যক্ষের আত্মীয়কে নিয়োগের পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানাই।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, গত লকডাউনের সময় আনজুমানের ফান্ডে টাকা কমে যাওয়ায় ৪/৫ শিক্ষকের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। এমপিও এবং ননএমপিও সবাই বেসরকারি অংশ বেতন বন্ধ থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আজিজুল ইসলামের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। আনজুমান ট্রাষ্ট চিঠির মাধ্যমে তাদের বেতন বন্ধ রাখতে বললে আমার কিছু করার থাকে না। তাছাড়া এটি ননএমপিও পোস্ট। এখনো ওনাকে আমরা ছাটাই করিনি। ট্রাস্ট না চাইলে তো আমি তো ওনাকে রাখতে পারব না। এখনো তিনি আমাদের শিক্ষক। তবে, ক্লাস করতে দেয়া হচ্ছে না। তার পরিবর্তে অপর শিক্ষক কিভাবে ক্লাস চালাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি অধ্যক্ষ মাওলানা শাহাদাত হোসেন।

দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছর চাকুরী করার পর কোন কারণ ছাড়া চাকুরিচ্যুতি ও বেতন-ভাতা না দেয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দে বলেন, আমাদের কাছে যেহেতু অভিযোগ এসেছে। আমরা তা তদন্ত করে দেখব। চাকুরীচ্যুতির বিষয়টি আসলে বিধিমোতাবেক হয়েছে কিনা এবং নানা অনিয়মের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। অন্যায় প্রমানিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এডিসি।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।