বার্তা পরিবেশক:
কক্সবাজার শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তার কন্যা রুপা পাশার মালিকানাধীন দোকানটি প্রভাবশালীদের সঙ্গে আতাত করে দখলে নিয়ে উল্টো জামানতের টাকার জন্য প্রাণনাশসহ নানাভাবে অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছে খোদ ভাড়াটিয়া।
এ ঘটনায় বিভিন্নজনের দারস্থ হলেও সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা রুজু করে বিপাকে পড়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রুপা পাশা এবং তার স্বামী, কক্সবাজারের বিশিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটন উদ্যোক্তা নুরুল কবির পাশা।
এমন অভিযোগ করেছেন কক্সবাজারের বিশিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী, ভুক্তভোগী রুপা পাশা এবং তার স্বামী নুরুল কবির পাশা।
অভিযোগে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা কন্যা রুপা পাশা বলেন, সংঘবদ্ধ এ প্রভাবশালী, চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্রের সঙ্গে আতাত করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত ড্রাগন মার্কেটে নিজ মালিকানাধীন দুটি দোকান, শহরের বিমানবন্দর এলাকার নজু মিয়ার ছেলে দিদারুল আলম ও মধ্যম বাহারছড়ার মৃত মকবুল আহমদের ছেলে আব্দুল হামিদ। তারা দোকান দুটি ছেড়ে না দিয়ে তাদের জামানতের টাকা ফেরত চেয়ে উল্টো লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বলে জানান দোকান মালিক রূপা পাশা।
অভিযোগে তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় গত ১৭ জানুয়ারি ভাড়াটিয়া দিদারুল আলমের ভায়রাভাই রাশেদুল ইসলাম ডালিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বৈঠকে একটি সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তমতে ভাড়াাটিয়াদের(জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত) ৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকার মধ্যে সালিশ কারকদের অনুরোধে তিন লক্ষ দশ হাজার টাকা মওকুব করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে লকডাউনে দুই মাসের ভাড়া অন্তর্ভুক্ত আছে। বৈঠকের সিদ্ধান্তমতে দোকান মালিক রুপা পাশাকে দোকান দুটি খালি করে বুঝিয়ে দিয়ে তাদের জামানতের ১০ লক্ষ টাকা হতে ২ লক্ষ টাকা কর্তন করে ৮ লক্ষ টাকা ভাড়াটিয়াকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরদিন আদালতে গিয়ে উভয় পক্ষ ওই ঘটনায় মালিকপক্ষের দায়েরকৃত মামলাটির আপোশ মিমাংসের সিদ্ধান্ত হলেও বৈঠকের একদিন পর গৃহীত সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের কব্জায় দোকান দু’টি দখলে রেখে উল্টো জামানতের টাকা ফেরত দিতে দোকান মালিকের স্বামী নুরুল কবির পাশাকে নানাভাবে হুমকি এবং চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন দিদার এবং হামিদ।
দোকান মালিক রুপা পাশা বলেন, ২০১৮ সালের মার্চের ১১ তারিখ কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল করের কাছ থেকে তার নিজ দখলীয় এবং মালিকানাধীন ড্রাগন মার্কেটের ২টি দোকান নোটারী মূলে ক্রয় করি(যার রোটারী নং-১৫১)।দোকান দুটো ক্রয়ের পর দিদার এবং হামিদকে ভাড়া দিয়ে কিছুসময় ভাড়া পেলেও মোয়াজ্জেম হোসেন শাওন নামের প্রভাবশালীর সঙ্গে আঁতাত করে ভাড়া প্রদান করেননি ভাড়াটিয়ারা।
এ ঘটনায় রূপা পাশা ও তার স্বামী নুরুল কবির পাশা অসহায় হয়ে বিচার চাইতে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরার পর শেষমেষ আদালতের আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান।
বর্তমানে মোয়াজ্জেম হোসেন শাওন এবং ভাড়াটিয়া যোগসাজশ করে দোকান দু’টো আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন বলেও অভিযোগ রুপা পাশার।
রূপা জানান, গত ২০১৮ সালে পৌর শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার বাসিন্দা সমেরেন্দ্র কর এর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জল কর থেকে তার দখলীয় ডিভাইন বীচ পয়েন্ট এলাকায় ড্রাগন মাঠ মার্কেটে ৫ ও ৬ নং দোকান দুটি ২০ লক্ষ টাকায় নিয়ে দোকানের মালিকানা এবং দখল বুঝে নেন। পরে ৫নং দোকান দু’টি দিদারুল আলম এবং আব্দুল হামিদকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা করে যথাযথ চুক্তির মাধ্যমে ভাড়া দেওয়া হয়। লোভের বশে দোকানগুলো আত্মসতের পাঁয়তারা করছে ভাড়াটিয়ারা। ভাড়া চাইতে গেলে দোকানের মালিককে তার মালিকানা অস্বীকার করে হুমকি দেয় ভাড়াটিয়ারা। তারা প্রকৃত মালিককে ভাড়া প্রদান করবেনা বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন রুপা।
প্রাপ্ত অভিযোগ মতে, ভাড়াটিয়ার এমন আচরণ এবং হুমকি থেকে বাঁচতে আদালতের আশ্রয় নেন রুপা পাশা। কক্সবাজার সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রন আদালতে রেন্ট কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স এর ১৯(১) ধারা মতে বাড়ী ভাড়া মিচ মামলা ১২/২০২২ দায়ের করেন দোকান মালিক। তবে আদালতে মামলার দায়েরের বিষয়টি জানতে পারলে ভাড়াটিয়া এবং তাদের সঙ্গে থাকা প্রভাবশালীরা রুপা পাশা এবং তার স্বামী পল্লবকে অব্যাহত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রতিবছর দোকান দু’টির আয়কর প্রদান করে আসছেন রুপা পাশা।
রূপা পাশার স্বামী, পর্যটন উদ্যোক্তা নুরুল কবির পাশা পল্লব জানান, “আমার বাড়ি কক্সবাজারের টেকপাড়া হলেও আমি বিয়ে করি ঢাকা থেকে। আমার শশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজের মেয়ের নামে দুটি দোকান ক্রয় করে দিয়েছিল। এখন তা আমরা হারাতে বসেছি। এই বিচার নিয়ে বিভিন্ন জনের কাঝে গেলেও কোন সুরাহা এখনো পাইনি। আমার স্ত্রীর নামে পৌর আওয়ামী লীগের নেতা উজ্জল কর এর কাছ থেকে নগদ ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে এই দোকান দুটি ক্রয় করেছিলেন। এখন মালিক বনে গেছে আরেকজন । আমাকে ভাড়া দিচ্ছেনা গত কয়েক মাস ধরে।”
এদিকে ড্রাগন মার্কেট এর ৫ নং দোকানের ভাড়াটিয়া দিদারুল আলম জানান, আমি শুরুতে বর্তমানে যে দোকানটি করছি তা রূপা পাশার কাছ থেকে নিয়েছিলাম। গত ৭- ৮ মাস আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওন আমার দোকানে এসে তালা লাগিয়ে দেয়। শাওন প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে তার সাথে সমঝোতা করে আমরা বর্তমানে দোকান দু’টিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
৬নং দোকানের ভাড়াটিয়া আব্দুল হামিদ জানান, এখানে আমাদের কোন হাত নেই । আমরা এখন শাওনকে ভাড়া প্রদান করছি। কারণ এই মার্কেট এর মালিক তিনি। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা পল্লবেী কাছ থেকে দোকান নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে শাওন মালিকানা দাবি করলে আমার নিরুপায় হয়ে তাকে ভাড়া প্রদান করছি।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জল করের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার দখল স্বত্ত আমি রুপা পাশাকে বিক্রি করেছি। বিক্রির পর রূপা পাশা দোকান দুুটি ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু এতোদিন পর কেন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে করছে তা জানা দরকার এবং আইন শৃংখলা যেন নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
অপরদিকে এ ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবি করে বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা রুপা পাশা এবং তার স্বামী নুরুল কবির পাশা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।