এতটা এক তরফা ম্যাচ হবে কেউ ভাবতেই পারেনি। বরং, সবারই ভাবনা ছিল, পাকিস্তানকে কত সহজে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ধরে রাখে ভারত; কিন্তু সব হিসেব উল্টে দিয়ে উল্টো ভারতকেই বিধ্বস্ত করলো পাকিস্তান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়ে ভারতকে ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানেই অলআউট করে দিল পাকিস্তান। ঐতিহাসিক জয়টি এলো ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে।
মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি আর শাদাব খানের ত্রিমুখি আক্রমণে যখন ভারত নিশ্চিত পরাজয় দেখতে শুরু করেছিল, তখন একাই লড়াই করতে শুরু করণে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। পাকিস্তানি বোলারদের ভয়ঙ্কর বোলিংয়ের মুখে একাই দাঁড়িয়ে যান এই অলরাউন্ডার। শুধু তাই নয়, জুনায়েদ খান, হাসান আলি কিংবা শাদাব খানদের সমানে পেটালেন তিনি এবং ৩২ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন শেষ পর্যন্ত ৪৩ বলে খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস।
পান্ডিয়ার ইনিংস যেন বাতি নিভে যাওয়ার আগে জ্বলে ওঠা। তেমনই ইনিংসটা খেলে গেলেন তিনি। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ৬টি ছক্কার মার। অবশেষে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ৭৬ রান করে রানআউট হয়ে যান পান্ডিয়া। তবে আউট হওয়ার পর সতীর্থ জাদেজার ওপর ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় তাকে।
পান্ডিয়ার জ্বলে ওঠার আগে মোহাম্মদ আমিরের আসল রূপটা তাহলে এতদিনে টের পেলেন বিরাট কোহলিরা! গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে এই আমিরকেই পিটিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মারা। সেই আমিরই এবার অন্য রূপে ধরা দিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে। রীতিমত আতঙ্ক হিসেবে। মোহাম্মদ আমিরের পেস তোপেই যে থর থর করে কাঁপতে শুরু করে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ!
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতের সামনে ৩৩৯ রানের বিশাল পাহাড় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই ফিরলেন রোহিত শর্মা। এরপর বিরাট কোহলিকে ক্রিজেই দাঁড়াতে দিলেন না পাকিস্তানের এই বাঁ-হাতি পেসার। সর্বশেষ ইনিংসের ৯ম ওভারে ২১ রান করা শিখর ধাওয়ানকেও ফিরিয়ে দিলেন মোহাম্মদ আমির।
প্রথম স্পেল শেষ করে আমিরকে একটু বিশ্রাম দিলেন যেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। আক্রমণে নিয়ে আসলেন তরুণ স্পিনার শাদাব খান আর পেসার হাসান আলিকে। আক্রমণে এসে তারাও চেপে ধরলেন ভারতকে। ১৩তম ওভারের শেষ বলে যুবরাজ সিংয়ের বিপক্ষে জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদন করলেন শাদাব খান। আম্পায়ার নাকচ করে দিলেন সেটা।
কিন্তু রিভিউ চেয়ে বসে পাকিস্তান। তাতে দেখা গেলো বল ছিল একেবারে লাইনের ওপরে এবং মিডল স্ট্যাম্পেই বল আঘাত হানতো। ফলে আম্পায়ার নিজের ভুল শিকার করে নিলেন এবং আউট ঘোষণা করলেন যুবরাজকে। ৩১ বলে ২২ রান করে ভারতের ইনিংসটাকে মেরামত শুরু করেছিলেন তিনি; কিন্তু এলবির ফাঁদে কাটা পড়ে ফিরতে হলো তাকে।
এ পর্যায়ে ভারতের ভরসার নাম ছিল শুধুমাত্র মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু যুবরাজ ফিরে যাওয়ার পর তিনিও যেন সাহস হারিয়ে ফেললেন। ১৪তম ওভারে হাসান আলির ৩য় বলে স্কয়ার লেগে বল তুলে দিলেন। ফিল্ডার ইমাদ ওয়াসিম দুর্দান্ত ভঙ্গিতে তালুবন্দী করে নিলেন ক্যাচটা। ৫৪ রানেই পড়লো ভারতের ৫ উইকেট। ১৬ বল খেলে ৪ রান করে আউট হন ধোনি। ১৪ ওভারের মধ্যে ৫৪ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে এখন রীতিমত পরাজয় দেখতে শুরু করে দিয়েছে ভারত।
এর আগে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই রোহিত শর্মাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মোহাম্মদ আমির। কোনো রানই করতে পারেননি আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান তুলতে পেরেছে ভারত। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে বিরাট কোহলিকে নাচিয়ে ছেড়েছেন আমির।
ওই ওভারের তৃতীয় বলেই কোহলিকে সাজঘরে ফেরাতে পারতেন তিনি; কিন্তু স্লিপে দাঁড়ানো আজহার আলির হাত ফসকে বল গড়ায় মাটিতে। জীবন পেয়ে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না ভারতীয় অধিনায়ক।
পরের বলেই আউট কোহলি! আমিরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে পয়েন্টে শাদাব খানের হাতে ধরা পড়েন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ৩ রান করতেই ক্রিজ ছাড়েন কোহলি। দলকে রেখে যান ঘোর বিপদে!
৩৩৯ রানের লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা সবার আগে ফেরেন সাজঘরে। ৯১, ৭৮, ১২ ও ১২৩*; চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চার ইনিংসে রোহিততের রানের পরিসংখ্যান।
ভারতীয় ওপেনার ব্যাট হাতে কতটা ভয়ঙ্কর, তা বলে দিচ্ছে এই পরিসংখ্যানই। ফাইনালেও তার ব্যাট হাসবে, এমন প্রত্যাশাই ছিল ভারতীয় সমর্থকদের।
কিন্তু রোহিতকে আগে বাড়তে দিলেন না মোহাম্মদ আমির। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা পাকিস্তানি এই পেসার শুরুতেই সাজঘরে ফেরালেন ভয়ঙ্কর রোহিত শর্মাকে। আমিরের করা দ্বিতীয় বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন রোহিত। ভারতীয় এই ওপেনার খুলতে পারেননি রানের খাতাই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।