ফাইনাল এমনই হওয়া উচিৎ। স্কোর বোর্ডে উঠবে বিশাল রান। হবে ধুন্দুমার লড়াই। তবেই না ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের আসল মজা। তার প্রথম শর্ত আপাতত পূরণ হয়ে গেছে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারতের সামনে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে পাকিস্তান। চলতি টুর্নামেন্টেই অভিষেক হওয়া ওপেনার ফাখর জামান করেছেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। এছাড়া আজহার আলি এবং মোহাম্মদ হাফিজ করেছেন হাফ সেঞ্চুরি।
লন্ডনের কেনিংটন ওভালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জমজমাট ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি পাকিস্তান। ‘মাদার অব অল ক্রিকেট গেম’- নামে পরিচিতি পাওয়া এই ম্যাচে এতটা দুর্দান্ত ব্যাটিং করবে পাকিস্তান, তা হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি কেউ। মূলতঃ ভারতীয় বোলারদেরই আসল পরীক্ষাটা নিয়ে নিল পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়াল ৩৩৮ রান। ১০৬ বল খেলে ১১৪ রান করেন ফাখর জামান। ৫৯ রান করে রান আউট হয়ে যান আজহার আলি। ৩৭ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ হাফিজ। ২১ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন ইমাদ ওয়াসিম। ৫২ বলে ৪৬ রান করেন বাবর আজম।
শুরু থেকে যেভাবে পাকিস্তান ব্যাট করছিল তাতে টস হেরে ফিল্ডিং নেয়াটা কী ভুল হলো বিরাট কোহলির জন্য! ভারতীয়রা হয়তো এখন এ হিসাব-নিকাশই শুরু করে দিয়েছিল। কারণ খেলা প্রায় ২০-২২ ওভার পার হওয়ার পরও পাকিস্তানের একটি উইকেটও ফেলতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। ওপেনিং জুটিতে ছিড় ধরাতে পারেনি।
দারুণ সূচনা করেছিলেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার আজহার আলি এবং ফাখর জামান। যদিও ৩ রানে থাকতে ফাখর জামান নো বলের সৌজন্যে জীবন পেয়েছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলার মত বলই করতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা।
টান টান উত্তেজনাপূর্ণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাই ভোল্টে ফাইনালে আজহার আলি এবং ফাখর জামানের ব্যাটে ২০ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ওঠে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১১৪। দুই ওপেনারই পৌঁছে যান হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলকে। এরপরই ২৩তম ওভারে এসে ভাঙে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি।
দলীয় ১২৮ রানে এক ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন পাকিস্তানের ওপেনার আজহার আলি। দারুণ এক জুটি গড়ে যখন দুই ওপেনার পাকিস্তানকে বড় একটি স্কোরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন ভারতীয় বোলররা দুই ওপেনারের জুটিতে ভাঙন ধরানোর মত বলই করতে পারছিলেন না, তখন যেন ইচ্ছা করেই উইকেটটা ছুড়ে দিয়ে আসলেন আজহার।
রবিচন্দ্র অশ্বিনের করা দলীয় ২৩তম ওভারের শেষ বলে, স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়েই একটি রানের জন্য দৌড় দেন আজহার। বল ফিল্ডার জসপ্রিত বুমরাহর হাতে। এ কারণে ফাখর জামান কোনো সাড়া দিলেন না। আজহার আলি ততক্ষণে পৌঁছে গেলেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। বুমরাহ বল ধরেই ফেরত পাঠালেন ধোনির হাতে। মুহুর্তেই ভেঙে গেলো উইকেট। ৭১ বলে ৫৯ রান করে আউট হয়ে গেলেন আজহার আলি। ভাঙলো পাকিস্তানের দৃঢ়তাপূর্ণ ওপেনিং জুটি।
এর পরই যেন জ্বলে ওঠেন ফাখর জামান। ফাইনালের মত বড় মঞ্চ, তার ওপর ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। টান টান উত্তেজনা আর স্নায়ুর চাপে যেখানে অনেক বড় বড় খেলোয়াড়েরই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে মাত্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখানো এক বাম হাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান, ফাখর জামান কিনা দেখালেন দারুণ সাহসের। বুকের ছাতি কতটা চওড়া হলে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে সেঞ্চুরি করা যায়! নতুন ক্রিকেটার ফাখর জামান সেটাই দেখিয়ে দিলেন।
শুরুতে একটা জীবন পেয়েছিলে। মাত্র তিন রানে নো বলের সৌজন্যে বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপর ভারতীয় বোলারদের সামনে নিজের ব্যাটকে পরিণত করেছিলেন রীতিমত তলোয়ারে। ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া, জসপ্রিত বুমরাহ কিংবা রবিচন্দ্র অশ্বিনদের একের পর এক মাঠের বাইরে আছড়ে ফেললেন। তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
৬০ বলে পূরণ করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। অবশেষে ইনিংসটাকে পৌঁছান তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে। মাত্র ৯২ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরির মাইলফলকে। প্রথম পঞ্চাশ করতে যেখানে লাগিয়েছিলেন ৬০ বল, দ্বিতীয় পঞ্চাশ পূরণ করতে সেখানে লাগালেন মাত্র ৩২ বল। সেঞ্চুরির পর ফাখর জামানের ব্যাট আরও চওড়া হয়ে উঠছিল। ১০৫ বলে খেলেন ১১৪ রানের ইনিংস। ১০৬ বলে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে বলটা তুলে দেন আকাশে। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা সেই বলটিকে তালুবন্দী করে নিলে সমাপ্তি ঘটে মারমার-কাটকাট ব্যাটিংয়ে ফাখর জামানের ১১৪ রানের। দলীয় ২০০ রানে পতন ঘটে পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেটের।
এরপর আউট হন বাবর আজম ৪৬ রানে এবং শোয়েব মালিক ১২ রানে। এছাড়া পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ভারতীয় বোলাররা আর কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেনি। ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া এবং কেদার যাদব নেন ১টি করে উইকেট।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।