ভারতীয় বাংলা চ্যানেল স্টার জলসার ডেইলি সোপ কিরণমালা। চরিত্রের কিরণমালা নামে অভিনয় করছেন রুকমা রায়। এ নিয়ে নারী সমাজের কাছে এ সিরিয়ালটি ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। এবার টিভি পর্দার বাইরে এসে সেই ভৌতিক সিরিয়ালের নামানুসারে ঈদ বাজার দখল করেছে বাহারী পোষাক ‘কিরণ মালা’। এছাড়াও রাজকুমারী, ঝিনুক মালা, রাশি, ইচ্ছে নদী, ছুঁয়ে দিলে মন, জলকন্যা, এসব বাহারি নামগুলো এখন ঈদ বাজারে পোষাকের নামে ছেয়ে গেছে মার্কেট গুলো।
গত বছর ‘পাখি’ পোষাক নিয়ে মার্কেট গুলো ছেয়ে ছিল। এবারের ঈদ বাজারও ভারতীয় বিভিন্ন সিরিয়ালের নাম করণ করেছে বিভিন্ন ড্রেস। তবে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে ‘কিরণ মালা’। পোষাক গুলো জেলাসদরসহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মার্কেট গুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। যদিওবা এর আগে কিরণ মালা নামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের লেখার খাতাও লাইব্রেরী গুলোতে দেখা গিয়েছিল। নারী সমাজের কাছে বিভিন্ন ভাবে প্রচারণার ফলে বর্তমানে এসব পোষাক কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ক্রেতারা। প্রতিটি দোকানে এর মজুদও রয়েছে পর্যাপ্ত।
শুক্রবার শহরের শহরের ফজল মার্কেট, সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, সী কুইন মার্কেট, কবির মার্কেট, হকার মার্কেট, সুপার মার্কেট, ফিরোজা শপিং কমপ্লেক্স, এ ছালাম মার্কেট, রেজা কমপ্লেক্স, আপন টাওয়ার, হাজি শপিং কমপ্লেক্স, শর্মা কমপ্লেক্স, রশীদ কমপ্লেক্স, আলমাছ শপিং কমপ্লেক্স, গুলজার শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, এসব মার্কেট গুলোতে এবার চলছে ভারতীয় পোশাক কিরণমালার জয় জয়কার। এমন কোনো দোকান নেই যে দোকানে এই পোশাকটি খুঁজে পাওয়া ভার। প্রতিটি দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পোষাকটি। যেন সহজেই চোখে পড়ে এ জন্য কেউ রেখেছেন দোকানের সামনে আবার কেউ নারী সদৃশ্য বড় বড় পুতুলকে পরিয়ে দিয়েছেন এসব পোশাক।
কথা হলে চকরিয়া পৌর এলাকার সমবায় সমিতি মার্কেটের নবরুপা ক্লথের মালিক মো: শাহ আলম জানান, বর্তমানে বিশেষ করে কিরণমালা থ্রিপিচ এর চাহিদা দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি কিরণমালা শাড়িঁও নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। সর্বনি¤œ দুই থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত কিরণ মালা থ্রিপিচ পোষাকটি বিক্রি হচ্ছে। আর শাড়িঁ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে ৪হাজার টাকা পর্যন্ত। একই ভাবে উখিয়া, টেকনাফ, ঈদগাও, রামুসহ পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি ও বাইশারী মত গ্রামের দোকান গুলোতেও শহরের মত তাল মিলিয়ে প্রত্যেক দোকানেই এবারের ঈদের নতুন পোষাক কিরণ মালা তুলেছেন। এ পোষাকটি প্রচারের জন্য অনেকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে লিফলেট বিতরণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে কিরণ মালার নামে প্রতারণা করতেও ছাড়ছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাধারণ পোষাকের নাম ‘কিরণমালা’ নামকরণ করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে ঠকানো হচ্ছে বলে জানান রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া এলাকার মো: কামাল।
দেড় হাজার থেকে শুরু করে প্রায় ছয় হাজার টাকায় বিক্রি করছেন এই পোশাকটি বলে জানালেন শহরের একাধিক ব্যবসায়ীরা। কথা হলে শহরের সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান- ঈদ বাজার এখনো জমে উঠেনি। তবে এবার কিরণ মালা পোষাকটিই ক্রেতাদের আলোচনায় রয়েছে বলে জানান।
গতবারের ন্যায় এবারও মার্কেটগুলোতে ভারতীয় পোশাকের আধিপত্যে বেশ উদ্বিগ্ন সচেতনমহল। তারা মনে করেন, এভাবে ভারতীয় পোশাক দিনদিন বাজার দখল করলে দেশীয় পোশাক কিনতে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কাপড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে যারা উৎপাদন করছেন তারাও।
উল্লেখ্য, গতবারের মতো এবারও কিরণ মালা কিনে না দেওয়ায় এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। গত ২১ জুন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া তাছলিমা আক্তার (১২) নামের এক স্কুল ছাত্রী ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।