এবার বিএনপির ঘোষিত রূপকল্প ভিশন-২০৩০ নিয়ে অনলাইন যুদ্ধে নামছে বিএনপি। এর পাশাপাশি সভা-সেমিনার আর উঠান বৈঠকের মতো কর্মসূচি নিয়ে এগুচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা। আবার বিশাল সংখ্যক তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য অনলাইনে দলের পক্ষে প্রচারণা কার্যক্রমও শুরু করেছেন। এ জন্য তারা ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি করছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।
বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ কে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছেন দলটির নেতাকর্মী আর সমর্থকরা। দেশের জনগণও এই রূপকল্পকে আগ্রহভাবে দেখছেন। ভিশন-২০৩০ এর এই ইতিবাচক দিকটিকে কাজে লাগানোর জন্য সারা বছর ধরেই নানা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। এর মধ্যে কয়েকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীতে আরো সভা-সেমিনার করা হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি, তথ্য-প্রযুক্তি, সমাজ, শিক্ষা এবং রাজনীতিকে ২০৩০ সাল নাগাদ বিএনপি কোথায় নিতে চায়, গত সপ্তাহের বুধবার তার একটি রূপকল্প দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির এই রূপকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘ভিশন ২০৩০’। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য এই ভিশন বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হলেও তা বাস্তবায়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেবে দলটি।
এ নিয়ে এখন থেকে বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজন করা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই এই রূপকল্পের পক্ষে জনমত গঠন ও জনগণের কাছে তুলে ধরতে একাধিক ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ’ তৈরি করবে বিএনপির হাইকমান্ড। পরে অর্থনীতি, শিক্ষা, তথ্য-প্রযুক্তি, গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের থেকে মতামত নেয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার দিনব্যাপী ‘বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করেছে বিএনপি।
আবার অন্যদিকে দলটির ‘বিএনপি কমিউনিকেশন উইং’ ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগল, ইমেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিশন ২০৩০ এর পক্ষে প্রচারণায় নামছে। এই সেলের সাথে সম্পৃক্ত শায়রুল কবির খান জানান, আমরা ইতিমধ্যে অনলাইনে ভিশন ২০৩০ কে জনগণের দোড়গোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছি। তিনি জানান, দেশের একটি বড় অংশ এখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে জড়িত। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে দলের প্রচারনার জন্য অনলাইনকে গুরুত্বের সাথে দেখছি। এর পাশাপাশি আমাদের দেশ কোন কোন সেক্টর এখনো দুর্বল বা অনুন্নত রয়েছে সেই সকল দিকগুলোকেও আমাদের প্রচারণায় নিয়ে আসছি। সামাজিক ব্যাধী দুর্নীতিকেও নিয়ে আসা হচ্ছে এই প্রচারণায়। এই সকল দিকগুলোকে উন্নয়নের জন্য আমাদের ভিশনে কি বার্তা দেয়া রয়েছে তাও থাকবে আমাদের প্রচারণায়।
বিএনপি কমিউনিকেশন সেলের সাথে জড়িত অপর একজন নেতা জানান, বিশ্বের অনেক দেশেই প্রচারণার জন্য ইন্টারনেটকে বেছে নিচ্ছেন। সেটা নির্বাচন হোক কিংবা আদর্শ ও লক্ষ্য প্রচারণার জন্য হোক। আমরা এই প্রচারণাকে নির্বাচনের আগাম প্রস্ততি হিসেবে নিচ্ছি। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠিকে আমাদের এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করাই এখন মূল উদ্দেশ্য।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিষয়ভিত্তিক সেমিনার-আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন অটুট রাখতে জাসাসের উদ্যোগে কর্মসূচী নেয়া হবে। ছাত্ররাজনীতির জন্য ছাত্রদলের উদ্যোগে সভা করা হবে। এভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য পূর্ণ প্রস্ততি নিয়ে রাখবে বিএনপি।
বিএনপি কমিউনিকেশন উয়িং এর অপর একজন জানান, ইতিমধ্যে আমাদের দলের পক্ষ থেকে ৬টি মিডিয়া আউটলেট চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের ওয়েবসাইট-বাংলা ও ইংরেজি, বিএনপির ফেসবুক পেজ, বিএনপির টুইটার হ্যান্ডল, অপিনিয়ন ব্লগ ও চেয়ারপার্সনের টুইটার একাউন্ট।
জাসাসের সভাপতি ড. মামুন আহমেদ বলেন, জাসাস মূলত দুইটি বিষয়ে কাজ করে থাকে। একটি হচ্ছে সামাজিক আরেকটি সাংস্কৃতিক। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নেবো। খুব শিগগিরই দেশের সাংস্কৃতিক বোদ্ধা ব্যক্তি এবং সামাজিক বোদ্ধাদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে। আমরা সবার মতামত নিয়ে দেশের সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করতে চাই। সামাজিক বৈষম্যগুলো নিরসন করতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিও পরিবর্তনশীল। এখনকার প্রজন্ম নতুন কিছু চায়। সেই জায়গা থেকেই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। এই ভিশন জনগণের কাছে তুলে ধরতে এবং বাস্তবায়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং মিডিয়ার দ্বারা তা জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য অর্থনীতিবিদদের, গণমাধ্যমের জন্য সিনিয়র মিডিয়া ব্যক্তিদের, বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও শিক্ষবিদদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
সূত্র-পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।