নিউজিল্যান্ডের মাঠে কক্সবাজারের মুমিনুলের ব্যাটে যখন আলো ছড়াচ্ছিলো তখন তাঁর ঘরের মাঠে প্রোটিয়া নারীদের কাছে পরাস্ত হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। শীতের সকালে শিশিরের গ্রিজে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে, উল্টো নিজেরাই কুপোকাত রুমানার টাইগ্রেস বাহিনী। সম্প্রতি শেষ হওয়া থাইল্যান্ডে টি-টুয়েন্টি এশিয়া কাপে ব্যর্থ হয়ে ঘরের মাঠে সফরকারী প্রোটিয়াদের বিপক্ষে লড়াই করার আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও কোচ। কিন্তু তারপরও সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যাচ মিসের মহড়া এবং ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হার দিয়েই ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ালটন বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজ ২০১৭ এর প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে ৮৬ রানে পরাজিত করে ১-০ তে এগিয়ে গেছে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল।
সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সফরকারিরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে দুই ওপেনার লি ও স্টেইনের দৃঢ়তায় ১২২ রানের পার্টনারশিপে ২৫১ রানের বিশাল রান সংগ্রহ করে।
২৫২ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে, শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলীয় ৫ রানের মাথায় ১ ওভার ৫ বলে ওপেনার শারমিন আক্তার ব্যক্তিগত ২ রানের মাথায় পেসার খাকার দ্রুতগতির বল ব্যাটের কানায় লেগে তালুবন্দি করেন উইকেট রক্ষক লিজলি লি। এরপর জাহানারার দল জয়ের জন্য ধীরগতিতে ব্যাট চালাতে থাকে। এবার স্বাগতিক শিবিরে আঘাত হানে সফরকারি অধিনায়ক ডেন ভন নাইকার্ক। দলীয় ২৭ রানের মাথায় সানজিদা ইসলাম ব্যক্তিগত ৮ রানে ও দলীয় ৪০ রানের মাথায় ১৯ ওভার ৩ বলে ফারজানা হককে স্ট্যাম্পিং করেন উইকেট রক্ষক লিজলি লি। এরপর দলীয় ৫৬ রানের মাথায় সালমা খাতুনকে ব্যক্তিগত ১১ রানের মাথায় লি’র হাতে ক্যাচের ফাঁদে ফেলেন অভিজ্ঞ লুইস। ৪০ ওভার ৩ বলে দলীয় ১০৮ রানের মাথায় রুমানা আহমেদকে ৩৭ রানে বন্দি করে প্যাভেলিয়নে ফেরান সফরকারী অধিনায়ক নাইকার্ক। এরপর ৪১ ওভার ২ বলে দলীয় ১১১ রানের মাথায় ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার লুইসের বলে রিতু মনিকে ১ রানের মাথায় তালু বন্দি করেন ডেন ভন নাইকার্ক। ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে উইকেট রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা। সে ৯০টি বল খেলে, ১টি ছয় ও ৭টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেন।
আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার পেসার লুইস। ১০ ওভার বল করে ৫২ রানের খরচ করে ৩ উইকেট, অধিনায়ক ডেন ভন নাইকার্ক ৯ ওভার বল করে ২টি মেডেন করে ২৩ রানের ২ উইকেট এবং খাকা ৯ ওভার বল করে ১টি মেডেনে ৩৭ রানের বিনিময়ে ১টি উইকেট পান।
স্বাগতিক বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল পুরো ইনিংসে ১৬টি বাউন্ডারি ও ২টি হাই বাউন্ডারি হাঁকান।
এর আগে ওপেনিংয়ে ১২২ রানের জুটি গড়ে সফরকারী আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল। দলটির হয়ে ওপেনার লি সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন। ৭১ বলে ৬ চার ও ৭ ছক্কায় ১২২ এরও বেশি স্ট্রাইকে নাহিদা আক্তারের বলে পান্না ঘোষের হাতে ধরা পড়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করে আরেক ওপেনার আন্দ্রেয়া স্টেইন। সে ১২৩ বলে ২টি চারে এ ইনিংস খেলার পর সালমা খাতুনের বলে নিগার সুলতানার স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। এছাড়া অপরাজিত ছিলেন ৬২ রানে মাগনুন ডু পেরেজ ও ২০ রানে এম কপ। সফরকারিদের অন্য উইকেটটিও নেন সালমা খাতুন। ৭ বলে ৪ রান সংগ্রহ করে প্যাভেলিয়নে ফিরেন ট্রাইন।
বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভার বল করে ৩০ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন সালমা খাতুন ও ১০ ওভার বল করে ৪৫ রান খরচ করে ১ উইকেট সংগ্রহ করে নাহিদা আকতার। সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল ৭টি হাই বাউন্ডারির পাশাপাশি ১৬টি বাউন্ডারিও হাঁকান।
খেলায় আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেন গাজী সোহেল ও মসউদুর রহমান। ম্যাচ রেফারি জিএফ ল্যাবরয় ও রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন মাহফুজুর রহমান।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার সিরিজ দু’বার বাতিল হলেও অবশেষে নতুন বছরের শুরুতেই এ সিরিজ পুনরায় আয়োজন করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদও জানান প্রোটিয়া নারী দলের অধিনায়ক ডেন ভ্যান নাইকার্ক।
প্রসঙ্গত, ৫ ম্যাচ সিরিজের বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে ১৪, ১৬, ১৮ ও ২০ জানুয়ারি। সবগুলো ম্যাচ সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
পরে প্রেস বক্সে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দু’দেশের অধিনায়ক। প্রথমে আসেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘টসে জিতেও ব্যাটিং না নেয়াটা আমাদের ভুল ছিল’। যদিও ফিল্ডিং নেয়াটা গ্রাউন্ডসম্যানের পরামর্শ ছিল। তবুও এখনো সুযোগ আছে সিরিজটি নিজেদের করে নেয়ার। সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ডেন ভন নাইকার্ক আসেন সাংবাদিকদের সামনে। তিনিও বাংলাদেশের ভাল খেলার প্রশংসা করে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ একটি ভাল টিম’। তারা ব্যাটিং লাইনআপ খুব ভাল করেছে। আগামীতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলে বিজয়ের হাঁসি তাঁরাও হাঁসতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।