প্রতিদিনই চেম্বারে গড়ে পনের-বিশ জন করে জ্বরের রোগী আসছে। তাদের অনেকেই ঠিক মতো হাঁটতে পারছেনা। জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথার কথা বলছে। শুরুতে ডেঙ্গু মনে করলেও পরে ক্লিনিক্যালি বুঝতে পারি এ লক্ষণ নিয়ে যারা আসছেন তাদের সকলেই চিকুনগুনিয়া বা গ্রামের ভাষায় ল্যাংড়া জ্বরে ভুগছে। গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার এ ধরনের রোগী পেয়েছি। এ রোগে আক্রান্তের মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা নেই।তবে কয়েকদিন রোগীর হাড়ে-হাড়ে তীব্র ব্যথার ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বুধবার সন্ধ্যায় ঠিক এভাবেই সম্প্রতি রাজধানীতে চিকনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগের প্রথমদিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, জ্বর একশ’ চার-পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা পর্যন্ত উঠে। একই সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়। এন্টি চিকনগুনিয়া এন্টিবডি নামক এক ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বর্তমানে আইইডিসিআর, বিএসএমএমইউ ও গ্রীণ লাইফসহ বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে এ রোগের পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এ রোগটি এমনি এমনি সেরে যায় বলে তিনি জানান। অধ্যাপক আবদুল্লাহ জানান, ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া দুটি রোগেরই বাহক এডিস মশা। কিন্তু পার্থক্য হলো ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে আর চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশা ময়লা পানিতেও জম্মে। সুতরাং ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয় রোগ থেকে মুক্ত থাকতে বাড়ির আঙ্গিনাসহ সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সময়ে অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে চিকনগুনিয়া রোগ বাড়ছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণায় বলা হয়, ১৯৫২ সালে প্রথম তানজানিয়ায় রোগটি শনাক্ত হয। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টি দেশে রোগটি দেখা দিয়েছে। চিকনগুনিয়া রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য উপাত্ত নেই। বুধবার বিকেলে রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা নিয়মিত সার্ভিলেন্সে চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করছেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত সংখ্যক আক্রান্ত হয়েছেন তা বলতে পারবেন না। চিকনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য চিকনগুনিয়া অবহিতকরণ কর্মশালার আয়োজন করেছেন বলে জানান। এদিকে আগামী ২১মে বিএসএমএমইউ’র উদ্যোগে চিকনগুনিয়া বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।