মহাসাগরে কতসংখ্যক মাছ রয়েছে তা জানা আছে কি? জানা না থাকলে, উত্তরটা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের সেরা অনুমান হচ্ছে, মহাসাগরে ৩,৫০,০০০,০০০,০০০ সংখ্যক মাছ রয়েছে। অর্থাৎ ৩.৫ ট্রিলিয়ন। মহাসাগরের মাছের সংখ্যা গণনা প্রায় অসাধ্য একটি কাজ। এই সংখ্যা অবশ্য ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে মাছ শিকার, প্রজনন এবং পরিবেশগত কারণে।
মহাসাগরে অন্যান্য হাজার হাজার প্রাণীর পাশাপাশি বর্তমানে ১৮ হাজার প্রজাতির মাছ রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
মাছ গণনায় ব্যবহৃত পদ্ধতি
মাছ গণনার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে থাকেন। এর মধ্যে সবচেয়ে কমন পদ্ধতিগুলো হচ্ছে- সাবমেরিন, স্যাটেলাইট, ড্রোন এবং মাছের ওপর স্থাপিত জিপিএস সেন্সর। অন্যদিকে মাছ গণনা করা যায় যেহেতু ডুবুরিরা পানির নিচে যেতে, দেখতে এবং ছবিও তুলতে পারে।
এছাড়াও বিজ্ঞানীরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সংখ্যা অনুমানে সক্ষম হওয়ার জন্য জেলেদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। মাছ গণনায় বিজ্ঞানীরা নতুন দক্ষ পদ্ধতিও নিয়েও কাজ করছেন, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার। সংগৃহীত তথ্যগুলো কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের মাধ্যমে সহজে বিশ্লেষণ করা যায়। সব উৎসের তথ্য মিলিয়ে একটা অনুমানযোগ্য সংখ্যা দাড় করানো হয়।
মহাসাগরের স্তরসমূহ
গবেষকরা মহাসাগরের পানির স্তরকে পাঁচটি মূল স্তরে বিভক্ত করেছেন।
১. এপিপেলাগিক স্তর : এই স্তরকে সানলাইট অর্থাৎ সূর্যালোক জোন হিসেবেও অভিহিত করা হয়। উপরিতল থেকে ৬৬০ ফুট গভীর স্তরটি হচ্ছে, সূর্যালোক স্তর। অর্থাৎ সূর্যের আলো বেশ ভালোভাবেই পৌঁছাতে পারে।
২. মেসোপেলাগিক স্তর : কম আলোর এই স্তরকে (৬৬০-৩৩০০ ফুট) টোয়াইলাইট জোন অর্থাৎ গোধূলি জোন হিসেবেও অভিহিত করা হয়। বারিলে এবং ল্যান্টারফিশের মতো কিছু প্রজাতির মাছ এই জোনে পাওয়া যায়।
৩. বাথিপেলাজিক স্তর : ৩,৩০০ ফুট থেকে ১৩,১০০ ফুট নিচের স্তর এটি। এই অঞ্চলটি কখনো কখনো মিডনাইট জোন অর্থাৎ মধ্যরাত জোনে পরিণত হয়। মহাসাগর তলের এই জোনটি ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং কেবলমাত্র সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর বায়োলুমিনেসেন্স দ্বারা আলোকিত হয়।
৪. অ্যাবিসোপেলাজিক স্তর : ১৩,১০০ থেকে ১৯,৭০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত এই স্তর। বরফশীতল তাপমাত্রা এবং অন্ধকারের কারণে এই অঞ্চলে সামান্য জীব থাকে।
৫. হাডালপেলাজিক স্তর : মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতম অঞ্চল, যা ১৯,৭০০ ফুট থেকে ৩৫,৭৯৭ ফুট নিচে অবস্থিত।
মাছ গণনা যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
সমুদ্রে মাছের সংখ্যা বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কি পরিমান মাছ রয়েছে তা নির্ধারণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটা অনুমান করা যায় যে, জনসংখ্যার বিচারে কি পরিমান কাছ শিকার করা উচিত হতে পারে। এছাড়া মাছের সংখ্যার তথ্যগুলো সংগ্রহ করার মাধ্যমে মাছ বিষয়ক ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যগুলো কার্যকর হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা যায় এবং নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। তথ্যগুলো মৎস্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সরকারকে সমুদ্রের সম্পদ সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে। যেমন বিশেষ ক্ষেত্রে মাছ সংরক্ষণে মাছ ধরায় আইনি নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া মাছ গণনা এটাও প্রদর্শন করে যে, যেকোনো পরিবেশগত পরিবর্তন যেমন বিদেশী প্রজাতির আক্রমণে বিদ্যমান মাছের গোষ্ঠী প্রভাবিত হচ্ছে কিনা।
পরিবেশগত সমস্যা
মাছের প্রজাতি ধ্বংসের বড় কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত মাছ শিকার। বিশেষ করে তা যখন মাছ ধরার অচতুর অভ্যাসের সঙ্গে যোগ হয়। মাত্রাতিরিক্ত মাছ শিকার সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটায় এবং কিছু প্রজাতির মাছ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস বা নিখোঁজ হয়ে ওঠে। এছাড়া যেভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলে উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে, তাতে দূষণ বৃদ্ধি ও জলজ আবাসগুলোর অবনতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের ব্যবহৃত সামগ্রীগুলো ফেলার জন্য সাগর ক্রমশ একটি ডাম্পিং অঞ্চল হয়ে উঠছে। অন্যান্য উদ্বেগ যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং আক্রমণকারী প্রজাতির প্রভাব তো রয়েছেই।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।