কক্সবাজারের মহেশখালীতে সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে নিজেদের অস্ত্র জমা দেয়ার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার শতাধিক অস্ত্র তৈরির কারিগর, জলদস্যু ও সন্ত্রাসী ।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আশা নিয়ে আত্মসমপন করবেন তারা।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, উপজেলার কালারমারছরা ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে শনিবার অনুষ্ঠিত হবে অস্ত্রের কারিগর, সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে শতাধিক অস্ত্রের কারিগর, জলদস্যু আত্মসমপন করবে। তাদের স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সব ধরণের সহযোগীতা করা হবে। তবে যারা আত্মসমপন করবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিক আকরাম হােসেনের মধ্যস্থতায় এসব অপরাধীরা কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে আত্মসমপর্ণ করতে সম্মত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত মহেশখালী উপজেলার কালামারছরা ইউনিয়ন। এলাকায় প্রায়ই খুন, লুটপাট, দস্যুতা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘটে থাকে। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মহেশখালীর ওইসব দুর্গম এলাকায় অসংখ্যবার অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির কারাখানা আবিষ্কারসহ কারিগর ও জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করলে অনেক অস্ত্রের কারিগর,জলদস্যু ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য সেফহোমে আসা অপরাধীদের মধ্যে জিয়া বাহিনী, আয়ুব আলী বাহিনী, সিরাজ দৌলা, নুরুল আলম বদাইয়া, অস্ত্রের শীর্ষ কারিগর জাফর আলমসহ প্রায় ১৪ বাহিনীর শতাধিক সদস্য রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের আয়োজনে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপির কাছে নিজ নিজ অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমপর্ন করবে।
জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্নসমপর্ন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উপস্থিত থাকবেন। মহেশখালী কুতুবদিয়ার সংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, এছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে জলদস্যু, পাহাড়ি সন্ত্রাসী, চিহ্নিত ডাকাত অপরাধ জীবন ছেড়ে রাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ করবে। সূত্রমতে, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগর ও জলদস্যুরা দেড় শতাধিক অবৈধ অস্ত্র, প্রায় ২ হাজার গোলাবারুদ, ধারালো ভয়ংকর অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ আত্মসমর্পণ করবেন তারা।
আত্মসমর্পণে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী বেসরকারি টিভি চ্যানেল আনন্দ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি আকরাম হোসাইন জানান, শীর্ষ অস্ত্রের কারিগরদের কারখানা পর্যন্ত পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহযোগিতা ও উৎসাহে এ দুঃসাহসিক কাজে সফল হতে পেরে নিজে তৃপ্তি অনুভব করছি। অশান্ত উপকূলকে শান্ত করতে, এলাকার মানুষকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উক্ত অনুষ্ঠান সফল করতে কালারমারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফের ব্যাপক পরিশ্রম রয়েছে। কালারমারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ জানান, কক্সবাজার জেলার সবচেয়ে বেশি অপরাধ প্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত এই মহেশখালী উপজেলার কালামারছরা ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। খুন, রাহাজানি, দস্যুতা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ সব জঘন্য অপরাধকর্ম সংগঠিত হওয়া কালারমারছরার জন্য একেবারে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মহেশখালীর চিহ্নিত অস্ত্রের কারিগর ও কুখ্যাত বেশ ক’টি জলদস্যু বাহিনীর সর্দার, অস্ত্রের শীর্ষ কারিগর ও বাহিনীর সদস্যরা এদিন সদলবলে আত্মসমর্পণ করবেন।
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে, কুখ্যাত খউস্বর বর গ্রুপ, কালারবর গ্রুপ, আইয়ুব বাহিনীসহ ৮ টি পৃথক জলদস্যু বাহিনীর প্রধান, সদস্যরা, অস্ত্রের কারিগরদের সর্দার, দাগি পলাতক আসামিরা আত্মসমর্পণ করতে মধ্যস্থতাকারীর নিয়ন্ত্রণে সেফহোমে চলে এসেছে।
এসব কুখ্যাত বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত কালারমারছরাসহ উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এসব বিষয়ে সাহসের সাথে এখন মুখ খুলতে চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে অনুরূপভাবে ৪৩ জন সশস্ত্র জলদস্যু আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেখানে ৪৩ জনের মধ্যে আকরাম হোসাইনের একক মধ্যস্থতায় ৩৭ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আত্মসমর্পণকারীরা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়ার সমুদ্র উপকূলের ভয়ংকর জলদস্যুরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। আকরাম হোসাইনের মধ্যস্থতায় চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবাকারবারী টেকনাফে আত্মসমর্পণ করেছিলো।
গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জন জলদস্যু সরকারের কাছ থেকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে অনুদান পেয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে এখন ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।