৩০ নভেম্বর, ২০২৪ | ১৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  যারা ক্লাসে ৭০% উপস্থিত থাকবে না তাদের পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হবে না- শাহাজাহান চৌধুরী   ●  মহেশখালীতে তুলে নিয়ে সাংবাদিক মাহবু্বের উপর হামলা   ●  ব্যাটারী চালিত ই-বাইক মালিক সমিতি মরিচ্যা ও মৌলভী পাড়া কমিটি অনুমোদন   ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান

মাওলানা নুরুল ইসলাম রহ. স্মরণ

Mowlobi Nurul Islam
আমরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কক্সবাজার জেলার যে বেশ ক’জন বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও গুনীজনকে হারিয়েছি তাঁদের মধ্যে রামুর বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও ব্যবসায়ী, রামু চৌমুহনী ইসলামিয়া ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী আলহাজ্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম অন্যতম। তিনি গত ২০১৪ সালের এই তারিখে (৮মে) বিকাল সাড়ে ৩টায় রামু উপজেলা খাদ্যগুদামের পার্শ্বস্থ নিজ বাস ভবনে ইন্তেকাল করেন-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দেখতে দেখতে আজ তাঁর ইন্তেকালের এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকার পর ৬১ বছর বয়সে তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্ত জগতের বাসিন্দা হন। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ বহু আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। ইন্তেকালের পরদিন (৯মে) জুমাবার সকাল ১০টায় রামু বাইপাস স্টেশনস্থ ময়দানে মরহুমের নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। রামু বাইপাস ষ্টেশন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও জোয়ারিয়ানালা এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা হাফেজ আব্দুল হকের ইমামতিতে বিশাল নামাযে জানাযায় বিশিষ্ট আলেম-ওলামা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সামাজিক ও পেশাজীবি নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার শোকার্ত তৌহিদী জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শরীক হন। জানাযা শেষে পশ্চিম মেরংলোয়া জামে মসজিদস্থ কবরস্থানে মরহুমকে দাফন করা হয়।
মাওলানা নুরুল ইসলাম ১৯৫৩ সালের ১৮মে রামু পশ্চিম মেরংলোয়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম কবির আহমদ ভেন্ডার ছিলেন জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সাবেক মহাপরিচালক শায়খুল আরব ওয়াল আজম আল্লামা হাজী মুহাম্মদ ইউনুছ রহ. এর একনিষ্ট মুরিদ। সেই সুবাদে মাওলানা নুরুল ইসলাম রহ. এর বাড়িটি ছিল হাজী সাহেব হুজুর রহ. সহ দেশের বরেণ্য অনেক বুযুর্গানে দ্বীন ও বিশিষ্ট আলেম ওলামাদের পদচারণায় ধন্য। মাওলানা নুরুল ইসলাম ১৯৭৫ ইংরেজীতে চট্টগ্রাম আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ও পার্লামেন্টারিয়ান খতিবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ (রহ.) এর সরাসরি ছাত্র ছিলেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি নবী করীম স. এর সুন্নাত এবং হালাল উপার্জনে কোরআন শরীফে বর্ণিত পন্থা হিসেবে ব্যবসাকে জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে বেছে নেন। অত্যন্ত সততার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করে তিনি সুনামও অর্জন করে। রামু চৌমুহনীতে যে ক’জন আলেমেদ্বীন ব্যবসা বাণিজ্যে সততার ধারা প্রতিষ্ঠিত এবং ব্যবসায়িদের মধ্যে ইসলামী চেতনা জাগ্রত করার মহৎ মানসিকতা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তাঁদের মধ্যে মাওলানা নুরুল ইসলাম রহ. অন্যতম। ব্যবসা বাণিজ্যে লিপ্ত থেকেও তিনি কখনো পার্থিব মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েননি। বরং তিনি ইসলামী জীবনধারায় সমাজকে উদ্ধুদ্ধ করার প্রয়াসে দাওয়াতি কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সর্বসাধারণের মাঝে ইসলামে পবিত্র বাণী প্রচারের মহান ব্রতে শীর্ষ বুযুর্গানে দ্বীনের নির্দেশনায় দেশব্যাপী ইসলামী সম্মেলননের ধারাবাহিকতায় রামুতেও ইসলামী সম্মেলনের সূচনায় তাঁর অনন্য ভূমিকা স্মরণীয়। তিনি রামু ইসলামী সম্মেলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা অর্থ সম্পাদকসহ পরবর্তীতে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রামু বাইপাস স্টেশন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠাদের অন্যতম। এই মসজিদ কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেই সাথে পশ্চিম মেরংলোয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির ও সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিকভাবেও তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। নিজের প্রিয় উস্তাদ খতিবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. এর বিপ্লবী রাজনৈতিক চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইসলামী সমাজ বির্নিমাণের প্রত্যয়ে তিনি ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল নেজামে ইসলাম পার্টির সাথে আজীবন যুক্ত ছিলেন। তিনি এ সংগঠনের রামু উপজেলার সহ-সভাপতি ছিলেন। ইসলামী ছাত্রসমাজের একজন খাদেম হিসেবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের সুবাদে প্রায় সময় হযরতের সাথে আমার যোগাযোগ হত। যখনই কোন দাওয়াত বা সহযোগিতার বিষয়ে তাঁর শরণাপন্ন হতাম তিনি উধার চিত্তে ছাড়া দিতেন। তাঁদে দেখেছি একজন সদালাপি, ভদ্র ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ হিসেবে। দেখেছি হকের পথে অগ্রগামী সৈনিক এবং বাতিলে মোকাবিলায় প্রতিবাদী চেতনাদীপ্ত কন্ঠঃস্বর হিসেবে। আমাকে তিনি অত্যন্ত øেহ করতেন। কারণ হিসেবে তিনি শুভানুধ্যায়ীদের বলতেন “সত্যের পথে ছেলেটির নির্ভীকতা, দৃঢ়তা, স্পষ্টভাষিতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী চেতনা আমাকে মুগ্ধ করে।” স্বয়ং আমাকেও বিভিন্ন সময় তিনি উৎসাহিত করে বলতেন, “ভাই আপনাদের মত নির্ভীক, সত্য সন্ধানে ও প্রতিবাদী চেতনার তরুণদের সমাজে প্রয়োজন। আমি অধমের প্রতি মুরব্বিদের এরকম সু ধারণার জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞচিত্ত।
মহান আল্লাহর পথে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস ছিল মাওলানা নুরুল ইসলাম রহ. এর একান্ত সম্বল। ইন্তেকালের কয়েক বছর আগে তাঁর দূরারোগ্য ব্যাধি চিহ্নিত হওয়ার পরও তিনি নৈরাশ হয়ে পড়েননি। বরং ইসলামে অন্যতম রুকন পবিত্র হজ্ব আদায়ের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন এবং যথারীতি হজ্ব সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ ও রাসূল স. এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে আসেন। একদিকে বার্ধক্য অপর দিকে দূরারোগ্য ব্যাধি কোনটাই তাঁকে পরাস্থ করতে পারেনি। তিনি ছিলেন সতত কর্মচঞ্চল। আমৃত্যু তাঁর ঈমানী স্পৃহা ছিল শানিত প্রতিবাদী চেতনা ছল অদম্য। দ্বীনের মর্ম বাণী শ্রবণ ও প্রচারে তিনি বার্ধক্য ও অসুস্থ অবস্থায়ও টগবগে যুবকের মত কর্মচঞ্চল ছিলেন। ইন্তেকালের বছর দু’এক আগে আমাদের সাথে তিনিও ছুটে গিয়েছিলেন জোয়ারিয়ানালা হাইস্কুল ময়দানে একটি ইসলামী সম্মেলনে। সম্মেলন শেষে গাড়ি না পাওয়ায় আমরা বিব্রতবোধ করে তাঁকে বললাম, হুজুর আমরাতো হেঁটেও যেতে পারব, তবে আপনারতো কষ্ট হবে। তিনি দৃঢ়চিত্তে বললেন- না, কোন কষ্ট হবে না। আমিও হেঁটে যেতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এই বলে তিনি, তাঁর ভগ্নিপতি আমার প্রিয় উস্তাদ মাওলানা আবদুচ্ছালাম কুদ্ছী, আমি ও সাংবাদিক মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক হেঁটেই রওনা হয়ে গেলাম। গভীর রজনীতে কনকনে শীতে আমাদের সাথে মাওলানা নুরুল ইসলামেরও এগিয়ে চলা প্রমান করে ইসলামের প্রতি তাঁর কি রকম ভালবাসা ছিল। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে দু’আ করি তিনি যেন মাওলানা রহ. কে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ মকাম দান করেন। আমিন।

লেখকঃ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদ।
সাধারণ সম্পাদক, রামু লেখক ফোরাম ও সদস্য রামু প্রেস ক্লাব।
ই-মেইল : যধভবুধনঁষসধহুঁৎ@মসধরষ.পড়স

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।