কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ নতুন করে সাগরে বিলীন হয়েছে। বেড়িবাঁধের নিমার্ণ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্টানকে দায়ি করেছেন ষাইটপাড়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৪২) খতিজা বেগম, (৩২) ও স্থানিয় বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহে অমাবস্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের এবং সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বেড়িবাঁধের এই ক্ষতি হয়। সংস্কার কাজের ৩ মাসের মধ্যে মাতারবাড়ির তিন কিলোমিটার বালির বেড়িবাঁধের আধাঁ কিলোমিটারই ধসে গেছে।
বালির বাঁধের বেড়িবাঁধের বড় অংশ ধসে যাওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে মাতারবাড়ির ৮০ হাজার বাসিন্দার। বেড়িবাঁধের বাকি এক কিলোমিটার অংশও যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তেমনটা হলে পুরো ইউনিয়ন সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেজ্ঞরা।
মাতারবাড়ীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, মাটি না পাওয়ার বাহানা দিয়ে বেড়িবাঁধ নিমার্ণ কাজ না করে এড়িয়ে চলছে দায়িত্বপাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। আর মাতারবাড়ি পানিতে প্লাবিত হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এর দায়ভার বহন করতে হবে। কারণ বিষয়টি উপ-দ্বীপের ৮০ হাজার মানুষের অস্থিত্বের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে দেশের উত্তর জপদের হাওর এলাকার মত রূপ নিয়ে পুরো মাতারবাড়ী সাগরে তলিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগের অধীন মহেশখালী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী ষাইটপাড়া বেড়িবাঁধ উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানিয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগসাজশে উক্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করছে।
উপজেলার মাতারবাড়ী ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধ দায়সারা সংস্কার কাজের কারণে নতুন করে বেড়িবাঁধের ভাঙানের সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে মাটির পরিবর্তে বালি ও বালির বস্তা দিয়ে দৃশ্যমান সংস্কার কাজের কারণে জোয়ারের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানিয় ষাইটপাড়া বাসিন্দা আলমাস বেগমের অভিযোগ। সিডিউল মোতাবেক বেড়িবাঁধের পাশ থেকে বালি নেওয়ার নিয়ম না থাকলে ও এখানে বালি দিয়ে সংস্কার কাজ করেছে। দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার মানিক চৌধুরী কন্ট্রাকটার দুর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে হরিলুট করে নিম্মমানের কাজ চালিয়ে সরকারী বরাদ্দকৃত ৪৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছে। সামনে বর্ষা মৌসুম আসায় কৌশলে ঠিকাদার মাটি জোগাড় করতে পারছেনা বলে অজুহাত দেখিয়ে নয় ছয় করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে বলে ও এমন অভিযেগ উঠেছে। এতে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড প্রেস।
সম্প্রতি জোয়ারে ষাইটপাড়া বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ায় কয়েক’টি গ্রামের রাস্তা-ঘাট বসতবাড়ী লবণ মাঠ তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন লবণ চাষী ও স্থানীয় লোকজন। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠে ইতিমধ্যে বেঁড়িবাঁধ ব্লক দিয়ে স্থায়িভাবে নিমার্ণ না হলে আন্দোলনে যাবে বলে হুমকি দিয়েছেন। বলতে গেলে নিয়তির সাথে যুদ্ধে চলছে মাতারবাড়ীর ৮০ হাজার মানুষের। সিঙ্গাপুরের স্বপ্ন দেখা এই মানুষ গুলো এখন ঘুমের ঘোরে লাফিয়ে উঠে জোয়ারের পানিতে বসত বাড়ি ডুবে যাওয়ার আতংকে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ও ঠিকাদারের গাফেলতির কারণেই দ্বীপের এ দশা বলে জানিয়েছেন। ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকির মধ্যে আছে সাইরার ডেইল, সরদারপাড়া, মগডেইল, নয়াপাড়া, ষাইটপাড়া, মশরফ আলি সিকদারপাড়া, মাঝের ডেইল, মাইজপাড়া, হংস মিয়াজির পাড়া, সিকদারপাড়া, মিয়াজিপাড়া ও সর্দারপাড়াসহ ২২টি গ্রামের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর রাজ ঘাট ও দক্ষিণ রাজ ঘাটসহ পশ্চিমে সাইরার ডেইল ও ষাইটপাড়ার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ সাগরের তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙছে বালির বাধঁও।
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদার মানিক চৌধুরী বলেন, ৩’শ মিটারের বেড়িবাঁধ কাজের মধ্যে একশ ৭০ মিটার কাজ করে আমি কৃর্তপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আর একশ ৩০ মিটার বেড়িবাঁধ মাটির অভাবে সংস্কার করতে না পারায় কর্তৃপক্ষকে অভিহিত করেছি। এবং মাটি পেলে কাজ করবে বলেন।
মহেুশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভানায় স্থানীয় এলাকাবাসী অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তাই বাঁধটি রক্ষার জন্য স্থানিয় চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলীকে অবহিত করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।