বিশাল আকারের ইয়াবার চালান আটকের ঘটনায় জড়িত থাকায় কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এ এসআই) বেলালকে চকরিয়া মাতাহুরী পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে পুলিশের উধর্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তাকে এখানে বদলি করা হয়েছে। ইয়াবার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: গত রোববার ভোররাতে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ কর্তৃক প্রায় ২৭ কোটি টাকা মুল্যের ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম পুলিশের বিশেষ শাখার এক এএসআই-কে গ্রেফতারের পর ইয়াবা ব্যবসায় পুলিশি সিন্ডিকেটের সন্ধান পায় র্যাব। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার কেন্দ্রিক অন্তত ১২ জন পুলিশ সদস্য এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র বড় বড় ইয়াবার চালান নির্বিঘেœ পাচার করে সিন্ডিকেটের পুলিশ সদস্যরা প্রতিমাসে এক কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন জানান, গত রোববার প্রায় ২৭ কোটি টাকা মুল্যের ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি বৃহৎ চালান আটকের পর এর পাচারকারী চক্রে পুলিশের একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পাওয়া যায়। এই সিন্ডিকেটের একজন প্রভাবশালী সদস্য পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই মাহফুজুর রহমান। রোববার একটি এলিয়ন ব্র্যান্ডের প্রাইভেটকার যোগে (ঢাকা মেট্রো গ-১৭-১৭১৮) কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পাচারের সময় ২৭ কোটি টাকার ইয়াবাসহ ফেনী জেলার লালপোল নামক এলাকা থেকে এএসআই মাহফুজ ও তার গাড়ি চালককে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। র্যাব জানায়, এএসআই মাহফুজুর রহমানকে বহনকারী প্রাইভেটকারটি তল্লাশি করে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ছাড়াও ইয়াবা ব্যবসার টাকা লেনদেনের ২৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি হিসাব বিবরণীও পাওয়া গেছে। এই হিসাব বিবরণীতে রয়েছে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম। এ ছাড়া গাড়ি থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন এবং ৮টি ক্রেডিট কার্ডও উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এএসআই মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন ২০১১ এবং ২০১৩ সালে কক্সবাজার ও টেকনাফ উপজেলায় কর্মরত থাকার সময় থেকেই তিনি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। টেকনাফ ও কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতার সুযোগে কোটি টাকা আয়ের হাতছানিতে ইয়াবা ব্যবসায় নিজেই সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন এএসআই মাহফুজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আটককৃত এএসআই মাহফুজ, এস আই বেলাল ও এএসআই আশিক নামের তিন পুলিশ কর্মকর্তা একসময় কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তারা স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে যুক্ত হন। পরে মাহফুজুর, আশিক ও বেলাল মিলে আরও কয়েকজনকে যুক্ত করে নিজেরাই একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এরপর থেকে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে তারা নিরাপদে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। নিজেরা পুলিশ সদস্য হওয়ায় তারা ছিলেন সন্দেহের বাইরে এবং তাদের ব্যবসা চলছিল নিরবিচ্ছিন্ন। গত দুই বছরে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে পুলিশি সিন্ডিকেটের প্রতিটি সদস্য প্রতিমাসে এক কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করতো বলে জানা গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইয়াবা ব্যবসায় পুলিশি সিন্ডিকেটের সদস্যদের প্রতিমাসে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে র্যাব।
আটকের পর এএসআই মাহফুজ র্যাবকে জানিয়েছেন, গত শনিবার ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা তিনি কক্সবাজারের বাহারছড়ায় সার্কিট হাউজ রোডে ১৫২ নম্বর হাজী আমির ম্যানশনে অবস্থিত পুলিশের এস আই বেলালের বাসা থেকে গাড়িতে তুলেছেন। প্রতিবারই তিনি বেলালের বাসা থেকেই ইয়াবাগুলো সংগ্রহ করতেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।