‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এই সময়ের বহুল আলোচিত মানবপাচার অপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে অন্তত একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে।
‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন’ অনুযায়ী সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ন শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড।
‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন’ অনুযায়ীই ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এটি ২০১২ সালের ৩ নম্বর আইন। মানবপাচার মামলার বিচারের ক্ষেত্রে এই আইনের ২১(১) ধারা বলছে, ‘এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোনো জেলায় মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে।’
ট্রাইব্যুনালের অর্থ সংস্থানের জন্য একটি প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী বাজেটে অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করবে।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে এ সংক্রান্ত মামলার কোনো পুলিশি তদন্ত শেষ হলে সেগুলো সংশ্লিষ্ট জেলার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’-এর মাধ্যমে বিচার শুরু করবে।
সচিবালয়ে রবিবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্য রিপোর্টের এ প্রতিবেদক ‘মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের বিষয়টি জানতে পেরেছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অন্তত প্রতি বিভাগে যেন একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন হয় সেই প্রস্তাব করা হয়েছে। মানবপাচার কোনো ছোটখাটো ক্রাইম নয়। এ জন্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন অনুযায়ী এগুচ্ছি আমরা।’
আপাতত ট্রাইব্যুনাল গঠনের চেয়ে চলতি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চান মন্ত্রী। তিনি জানান, এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে যেগুলোর পুলিশি প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাবে সেখানে ট্রাইব্যুনাল গঠন না থাকলেও সেই মামলার বিচার কাজ দ্রুত শুরু করা যায় সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। আইন অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেও এই বিচার শুরু হতে পারে।
মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২১(৩) ধারা অনুযায়ী, ‘এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের বিচার কেবল এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হইবে।’ তবে ২১(২) ধারায় বলা আছে, ‘আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত, সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ বা ক্ষমতায়িত করতে পারবে।’
এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলোর বিচার তো ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখতে পারব না। এই মামলাগুলোর যখন তদন্ত শেষ হয়ে যাবে, পুলিশের প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাবে তখন সেগুলোর যাতে বিচার চলতে পারে সে জন্যই আইনে নারী শিশু ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের কথা উল্লেখ রয়েছে।’
কোন কোন জেলায় ট্রাইব্যুনাল স্থাপন হবে— এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘যে সব জায়গায় মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে সে সব এলাকায় আগে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হবে।’ কিন্তু দেশের কোনো অংশকেই গুরুত্বের বাইরে রাখতে রাজি নন মন্ত্রী।
উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার দিয়ে মানবপাচার হয়েছে বলে শুধু কক্সবাজারেই ট্রাইব্যুনাল হবে বিষয়টি সে রকম নয়। কারণ মানবপাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের বিচারের জন্য ৬৪ জেলাতেই ট্রাইব্যুনাল থাকা উচিত বলে মনে করি। তবে আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের বিষয়টি চিন্তা করছি।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার জলসীমায় ব্যাপক মানবপাচারের ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছে। অনেক প্রতারিত বাংলাদেশী অভিবাসীর গণকবর পাওয়া যাচ্ছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে। এমন অবস্থায় সরকার পাচারকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো মামলাই বিচারের মুখ দেখেনি। মানবপাচার সংক্রান্ত মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে এই বিষয়ে দুই শত মামলা আছে জানার পরে যারা এই মামলা তদন্ত করছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি। আপাতত এতটুকুই বলতে পারব। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।’
আলোচ্য আইনের ৭ নম্বর ধারা সংঘবদ্ধ পাচারের শাস্তির বিধান অনুয়ায়ী, ‘কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য গোষ্ঠীর সকল সদস্যের সাধারণ অভিপ্রায় সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো আর্থিক বা অন্যকোনো বস্তুগত বা অবস্তুগত মুনাফা অর্জনের নিমিত্তে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করিলে উক্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য উক্ত অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত হইবে এবং অপরাধকারী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অন্যূন সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে এবং অন্যূন পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
মানবপাচার দমন আইনের অধীনে সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।