মানবপাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ২৯ মে এ বিষয়ে ১৫টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ জরুরি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে মানবপাচারের প্রকৃত কারণ তুলে ধরে এর প্রতিকার চাইবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের পক্ষে ওই সমাবেশে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মানবপাচারের কারণ এবং তা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ওই বৈঠকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ওই বিশেষ জরুরি বৈঠকে মানবপাচার প্রতিরোধে মিয়ানমারের সহায়তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধান চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে, অমানুষিক নির্যাতনের ফলে মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। যার ফল ভোগ করছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের কারণেই মানবপাচারের মতো ঘটনা ঘটছে।
বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে, মিয়ানমারের বাইরে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে আঞ্চলিক মানবপাচারের দালালচক্র সক্রিয়ভাবে অবস্থান করছে। আঞ্চলিক দালাল চক্রদের নির্মূল করতে দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।
মিয়ানমার সরকারের নির্মম অত্যাচারের কারণে ওই দেশের মুসলিম বা রোহিঙ্গারা বেঁচে থাকার জন্য পালাতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছের দেশ হওয়ায় নির্যাতিতরা টেকনাফ ও কক্সবাজারে অবৈধভাবে চলে আসছে। পাশাপাশি তারা অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশী সেজে পাচার হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত আঞ্চলিক দালালচক্র।
থাইল্যান্ডের জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান অনুসিত কুনাকম সম্প্রতি বলেছেন, ‘অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। এ জন্য আঞ্চলিক পর্যায়ের দেশগুলোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে। আশা করি, সামনের বিশেষ জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে সমাধান আসবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, মানবপাচারের শিকার হয়ে ৬০৩ বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় আছেন বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানান হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২২ জনকে বাংলাদেশী হিসেবে পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার জানিয়েছে ৭০০ বাংলাদেশীর কথা। যার মধ্যে ২৩৭ বাংলাদেশীকে শনাক্ত করতে পেরেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। থাইল্যান্ডে শনাক্ত হয়েছে ১৩৮ বাংলাদেশী (এর আগে একই বিষয়ে দেশটির কারাগারে ১৬৮ বাংলাদেশী বন্দী অবস্থায় রয়েছে)। একই ঘটনায় মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে ২০৮ বাংলাদেশীর কথা। তারা বাংলাদেশী কিনা— তা যাচাই করার প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
‘স্পেশাল মিটিং অন ইরিগুলার মাইগ্রেশন ইন দ্য ইন্ডিয়ান সি’ শীর্ষক বিশেষ জরুরি বৈঠকটি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের অননতারা সিয়াম ব্যাংকক হোটেলে ২৯ মে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল তানাসাক পতিমাপ্রাগন বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তৃতা দেবেন।
বৈঠকে তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর আলোচনা হবে। এগুলো হচ্ছে— সাগরে ভাসমান ও মানবপাচারের শিকার সাত হাজার মানুষের ঠিকানা কী হবে, মানবপাচার প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে কী করা যায়, যে দেশগুলো থেকে মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে, সে সব দেশের অবস্থান কী।
জরুরি এ বিশেষ বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে— মানবপাচার প্রতিরোধ করতে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ও সহযোগিতা, মানবপাচারের চাপ আন্তর্জাতিকভাবে ভাগাভাগী করে নেওয়া, মানবপাচারের শিকার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে গঠনমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন।
এদিকে, বিশ্বের ৮৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) ব্যাংককের জরুরি বিশেষ বৈঠক উপলক্ষে একটি যৌথ বিবরণী স্বাক্ষর করেছে। ওই যৌথ বিবরণীতে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার আগে সাগরে ভাসমান মানুষদের খাদ্য, পানীয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অসহায় মানুষদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।