২২ এপ্রিল, ২০২৫ | ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  টেকনাফে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ডাকাতদলের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১   ●  সিবিআইইউ’তে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে।   ●  গভীর রাতে পাহাড়ের মাটিভর্তি একটি ড্রাম ট্রাক( ডাম্পার) জব্দ করেছে কক্সবাজার বনবিভাগ   ●  অস্ত্র উদ্ধার ও ওয়ারেন্ট তামিলে জেলার শ্রেষ্ঠ হলেন এসআই খোকন কান্তি রুদ্র   ●  উখিয়ায় সাংবাদিক জসিম আজাদের জমি ও বসতবাড়ি দখলের চেষ্টায় হামলা   ●  কৃষকদল নেতা পরিচয়ে জমি দখল গুলি বর্ষণ আটক ১   ●  উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন   ●  প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি মিয়ানমার   ●  পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি’১৮ ব্যাচের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন   ●  উখিয়া সমাজসেবা কর্মচারীর নামে বিধবা ভাতা’র টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটাতে সম্মত হাসিনা ও মোদি

Pm_thereport24
 সুখ, সমৃদ্ধি আর প্রগতির জন্য মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটাতে একমতে পৌঁছেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে আবারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি। শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, এই অঞ্চলের শান্তি নিশ্চিত করতে সম্মত হয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুই প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।

ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, আজ আমি আনন্দিত ও গর্বিত। বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কিছুক্ষণ আগে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের চুক্তি বিনিময় করেছি। ৬৮ বছরের মানবিক যন্ত্রণার অবসান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্ব ভূয়ষী প্রশংসার দাবি রাখে। স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এ সময় স্মরণ করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের নেতা ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক মুহূর্তকে। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বলেছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার কল্যাণ ও সহযোগিতায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্মিলতিভাবে এই অঞ্চলের জনগণের জন্য শান্তি ও প্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রশংসার দাবি রাখে। শুধু অর্থনীতিতেই নয়- শিক্ষা, বাণিজ্য, সু-শাসনসহ সব দিক থেকে ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত শুধু আমাদের বন্ধু নয়, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং উন্নয়ন সহযোগী।

দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নে যে উদ্বেগ ও আশা আছে, তাতে আমরা উভয়ে একমতে পৌঁছেছি। আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। শুধু দুই দেশ নয়, এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি অর্জনে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছি। কানেক্টিভিটি দুই দেশ এবং এই অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা উভয়ে নৌ-প্রটোকল, বাস চালু, অভ্যন্তরীণ নৌ-চুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য বিষয়ে একমতে পৌঁছে চুক্তি ও সমাঝোতা স্বাক্ষর করেছি। চুক্তিগুলোতে যে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য ঘাটতি উপলব্ধি করেছেন। এই বিষয়ে তার সরকার সার্বিক সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মংলা ও ভেড়ামারায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এতে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়বে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভারত। আমরা আজ অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিষয়ে চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। আমরা উভয়ে উভয়কে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ গড়তে অঙ্গীকার করেছি। সিলেট ও খুলনায় ভারতের মিশন খুলতে সম্মত হয়েছি। আমাদের সহযোগিতার পদক্ষেপ আরও সুদৃঢ় হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ। আজকের দিনটি আমার জন্য ঐতিহাসিক দিন। আজ সকালে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী (জিনিয়াস) নেতা।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে চাই। এ জন্য আমরা দুই দেশের মধ্যে বাসসেবা চলাচল উদ্বোধন করেছি। এই সংযোগ দুই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। যাতে সমৃদ্ধি ও প্রগতির পথ সুগম হয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক আবেগের সঙ্গে জড়িত। আমরা উভয়ে একত্রে কাজ করে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে চাই। এই বিষয়ে আমরা দুই দেশ সম্মত হয়েছি। যাতে এই অঞ্চলের মানুষ সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে বসবাস করতে পারে। স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন সীমান্ত এলাকার লোকজনের দুঃখের দিনের অবসান ঘটিয়েছে। শুধু স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানই নয়, এর আগে আমরা সমুদ্র সীমানার সমাধান করেছি। সামনে পানি বিশেষ করে তিস্তার সমাধানও করবো। এই বিষয়ে আমরা একমতে পৌঁছেছি। দুই দেশ জ্বালানি খাতে একসঙ্গে কাজ করবো। এ ছাড়া আমরা মানবপাচার রোধ, সীমান্ত অপরাধ, জাল টাকা রোধ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে একসঙ্গে কাজ করে অপরকে সহায়তা করবো।

বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সম্মত হয়েছি। ভেড়ামারায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশী পণ্য (মদ ও অস্ত্র বাদে) ভারতে এখন থেকে বিনা শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা তাদের মধ্যে সম্পাদিত বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, অর্থ, সমুদ্র সম্পদ, প্রযুক্তিসহ ১৯টি চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। যার মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের দেওয়া ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রার ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) উল্লেখযোগ্য।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।