নুরুল ইসলাম হেলালীঃ ১০ মার্চ ২০১৯ সাল, বিগত ২০১৫ সালের এদিনে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদেকে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী একদল লোক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা সাদা পোশাকধারী হলেও এসময় নিজেরা আইনশৃংখলা বাহিনীর লোক পরিচয় দেয়। সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ অপহরণের ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বিকার করে। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারত পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর খালাস পেয়েছেন এবং এখনো তিনি শিলং এ অবস্থান করছেন। আইনী জটিলতায় তিনি এখনো দেশে ফিরতে পারেননি। ওই দিন রাতে সালাহ্উদ্দিন আহমদকে অপহরণের পূর্বে সাদা পোশাকধারীরা উত্তরার পুরো এলাকার লোকজন সরিয়ে দিয়ে এলাকাটি জনশুন্য করে ফেলে এবং একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, পরে তাঁকে গামছা দিয়ে চোখ বেধেঁ অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এঘটনার পর সালাহ্উদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ উত্তরা থানা ও গুলশান থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে পুলিশ এব্যাপারে অবহিত নয় বলে জানিয়ে দেয়, এমনকি একটি জি ডি দিতে চাইলেও পুলিশ স্ত্রী হাসিনা আহমদের জি ডি গ্রহন করেনি। এরপর হাসিনা আহমদ সাংবাদিক সম্মেলন করে ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্নস্থানে স্বারকলিপি প্রদান করেও সালাহ্উদ্দিন আহমদের হদিছ মিলেনি। কিন্তু সরকারের উচ্চ মহল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ কেহ এ অপহরণের ঘটনা স্বীকার করেনি। এদিকে সালাহ্উদ্দিন আহমদ কোন জায়গায়, কোন অবস্থায়, কোথায় আছে তার সঠিক সন্ধান না পাওয়ায় স্ত্রী, ছেলে মেয়ে ও আত্বীয়স্বজনসহ দেশের জনগণ হতাশায় ভোগছিলেন এবং স্ত্রী হাসিনা আহমদ স্বামীর খোঁজে চোখের ঘুম হারাম করে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এদিকে সালাহ্উদ্দিন আহমদের অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলো ব্যাপক সংবাদ প্রচার করে ঝড় তুলে। কিন্তু এব্যাপারে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাবরই অস্বিকার করে। পরে গুম হওয়ার দীর্ঘ ৬২ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের শিলং রাজ্যে সালাহ্উদ্দিন আহমদের পাওয়া যায় বলে সংবাদ প্রচার হয়। সেই থেকেই সালাহ্উদ্দিন আহমদ সেখানে ভারতের শিলং শহরে নির্বাসিত জীবণযাপন করছেন। ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে একটি গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই দিন কাকডাকা ভোরে একটি মাইক্রোবাস গাড়ী থেকে, সাদা পোশাকধারী একদল লোক শিলং শহরের গল্ফলিংক মাঠের পাশে রাস্তার উপর তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায়। পরে সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ চোখের কাপড় খুলে সামনে হেঁটে লোকালয়ে গিয়ে একটি দোকানের সামনে পাকা বাংকুতে বসে পড়ে। ওই অবস্থায় মর্নিং ওয়ার্ক করতে আসা কিছু লোকের কাছ থেকে তিনি জানতে চায়, এ এলাকার নাম কি ? উত্তরে তারা জানায়, এটি ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহর। ওই সময় তিনি তাদের কাছ থেকে আরো জানতে চান, পুলিশ স্টেশন কোথায় ? পথিকরা জানায়, কাছেই পুলিশ স্টেশন। তখন তিনি তাদের কাছে অনুরোধ করে, নিকটস্থ পুলিশের কাছে তাঁর অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়ার জন্য। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ এসে তাঁকে শিলং সদর থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তার শিলং পৌঁছার বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়। এসময় তিনি পুলিশকে জানায়, আমি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আমাকে বিগত ১০ মার্চ বাংলাদেশের ঢাকার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী একদল লোক অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে রাখে এবং দীর্ঘ ৬২ দিন পর আজকে অপর একদললোক আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদকে পুলিশ দ্রুত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ‘মিমহানস হাসপাতালে’ ভর্তি করে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং এ অবস্থান করছেন আজ দীর্ঘ চার বছর। তিনি বর্তমানে শিলংএ অবস্থানকালে শারিরীকভাবে ভাল আছেন। যদিও চিকিৎসার জন্য দিল্লীতে আসা যাওয়া করেছেন বেশ কয়েকবার। ভারতীয় একটি পাসপোর্ট এক্ট আইন মামলায় জড়িত হয়ে দীর্ঘ প্রায় চার বছর যাবৎ তিনি ভারতের শিলং এ অবস্থান করছেন এবং তিনি ঐ মামলায় খালাস পেয়ে সেখানে মুক্ত অবস্থায় জীবণযাপন করছেন। বিগত ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর শিলং আদালত সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদকে মামলা থেকে খালাস দিয়ে আদালত শিলং পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। কিন্তু শিলং পুলিশ উক্ত চিঠি আমলে না নিয়ে সালাহ্উদ্দিন আহমদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে। যে কারণে সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের আসা বিলম্বিত হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদের ঘনিষ্ট সুত্রে জানা যায়, তিনি দেশে আসার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে খালাস পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং তিনি আশা প্রকাশ করছেন, আগামী অল্পদিনের মধ্যে দেশে ফিরে আসতে পারবেন। সূত্র আরো জানায়, তিনি বাংলাদেশে অপহরণ, গুম পরবর্তী ঘটনার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাটিং, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও আন্তর্জাতির সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রমানাদি ভারতের বিচারাধীন আদালতে উপস্থাপন করেন এবং উক্ত উপস্থাপিত প্রমানাদি দেখে বিজ্ঞ বিচারক উক্ত মামলা থেকে সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদকে খালাস দিয়েছেন বলে তিনি দাবী করছেন। শিলং নর্থ ইস্ট খাসিয়াহিল জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ডিজি খারশিং সালাহ্উদ্দিন আহমদকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষনা করেন। মেঘালয় রাজ্যের সিনিয়র আইনজীবী সাবেক পিপি এসপি মোহন্ত এই মামলা পরিচালনা করেন। ভারত সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পি পি রাজিব নাথ।
বিগত ১৫ সালের ১১ মার্চ ভারতের শিলং এ গুম অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার পর আজ দীর্ঘ চার বছর যাবৎ সাবেক মন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমদ ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতে অবস্থানকালে সালাহ্উদ্দিন আহমদের কিডনী, ঘাড় ও চর্ম রোগ এর সমস্যা দেখা দিলে তিনি একাধিকবার দিল্লী গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রথমবার দিল্লী গিয়ে ঘাড়ে অস্ত্রোপাচার করেন দ্বিতীয়বার গিয়ে কিডনীতে অস্ত্রোপাচার করেছেন এবং তিনি এখন আপাতত সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন। দিল্লীর হরিয়ানা রাজ্যের মেদান্ত হাসপাতালে তিনি উক্ত চিকিৎসা নিয়েছেন। ঐ রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পর, তিনি এখন সুস্থ থাকলেও ঠান্ডাজনিত কারণে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন কারণ শিলং এ প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদ শিলং এ সানরাইজ নামে একটি গেস্ট হাউজে অবস্থান করে থাকেন। শিলং মেঘালয়ের রাজধানী, শিলং এর কেন্দ্রস্থল পুলিশ বাজার থেকে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দুরে লাবান এলাকায় ওই গেস্ট হাউজ অবস্থিত। উক্ত গেস্ট হাউজটি দেখতে খুবই সুন্দর। এটি নির্মাণে যথেষ্ট নৈপুণ্যতা রয়েছে, উক্ত গেস্ট হাউজে সাতটি রুম রয়েছে। এর মধ্যে একটি রুমেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদ অবস্থান করেন। সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমদ ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে বছরে দু’একবার দেখা করার জন্য শিলং এ গিয়ে থাকেন। এছাড়াও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতাকর্মীও শুভাকাঙ্খীরা সালাহ্উদ্দিন আহমদের সাথে দেখা করার জন্য ভারতের শিলং এ যাওয়া আসা করে থাকে। তিনি নামাজ দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত, হাদিস, পত্র পত্রিকা ও বই পড়ে মেঘালয়ের শিলং এ নির্বাসিত জীবণ কাটাচ্ছেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।