মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে গত জুনে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরে উত্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে সংস্থাটি এ আশঙ্কা করছে। গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা, অবাধ চলাফেরার ওপর ব্যাপক বিধিনিষেধ, জীবন ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা, যৌন সহিংসতা, রাজনৈতিক অধিকার সীমিত করাসহ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র ফুটে উঠেছে। সহিংসতার ধরন দেখে যে আশঙ্কা জাগছে তা হলো, রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে থাকতে পারে।’
এদিকে গতকাল সোমবার সাত দিনের সফরে মিয়ানমারে পৌঁছেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। সফরকালে তিনি সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে রাখাইন রাজ্যে যাবেন বলে জানা গেছে। সেখানকার নৃ-তাত্ত্বিক বিভাজন কিভাবে কমানো যায়, তা অনুসন্ধানে বিশেষ কমিশন গঠন করেছেন অং সান সু চি। ওই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে কফি আনানকে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ যে সময়ের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছে, বর্তমান পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। গত ৮ অক্টোবর মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষী পুলিশের (বিজিপি) ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশমুখী মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ঢলের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় গত জুন মাসে যেসব সুপারিশ করেছিল দেশটির সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি।
জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র গতকাল জেনেভায় বলেছেন, গত ৮ অক্টোবর রাখাইন প্রদেশে বিজিপি চৌকিতে হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর।
মুখপাত্র আরো বলেন, ‘হাইকমিশনার এসব খবরে শঙ্কিত। বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেসামরিক অবকাঠামো গণহারে ধ্বংস, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার, যৌন সহিংসতাসহ সামাজিক গণমাধ্যমে নতুন করে ঘৃণার বার্তা প্রচারের অভিযোগ আসছে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও অত্যন্ত বিপজ্জনক এসব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে, মিয়ানমার সরকারের এসব সহিংসতার নিন্দা জানাতে না পারলে আগামী দিনে তা আরো বাড়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেছেন, মালয়েশিয়ার একার পক্ষে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়। এতে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি), আশিয়ান ও জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ লাগবে। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী রবিবার মালয়েশিয়ায় র্যালি হবে। তাতে নাজিব রাজাকও অংশ নেবেন। তাঁর দপ্তর থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।