বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া অগ্নিকান্ডে লেলিহান শিখা একের পর এক পাহাড়, বনায়ন, সবজি ক্ষেত পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন, উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি অগ্নি নির্বাপক দল, পুলিশ যৌথ ভাবে গতকাল বুধবার দিন ভর চেষ্টা করেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেনা। সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে ২ জন দগ্ধ সহ ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অগ্নিকান্ডে পাশ্বেবর্তী সীমান্তের আমতলী ও তুয়াইংগা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্প ঝুঁিকর মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল বুধবার সরজমিনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং সীমানা খুটির মাঝামাঝি শিলের বাঁধ, দক্ষিণের ও উত্তরের পাহাড়, নজির আহমদের বাগান, জামাল সিকদারের রাবার বাগান, অলী ফকিরের ছনখোলা, আলিদ্দিন বুইজ্জার খামার, শিখকুমের পাহাড়, সবুজের সেগুন বাগান, মাষ্টার নূরুল আমিনের আম বাগান, প্রতিবন্ধি আব্দুর রহমানের কলা বাগান, ডাঃ ছুরুত আলমের বনায়ন, সিরাজ মিয়ার কলা বাগান, বদিউর রহমান, মেহের আলী, ছৈয়দ নূরের ছনখোলা সহ অন্তত ৭ হাজার একরের বেশি পাহাড়ী এলাকার বনায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত খামার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল সকাল ১১ টা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাফায়েত মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম, স্থানীয় আমতলী বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল বারিক, তুইয়াংগা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার জাকির হোসেন, টেকনাফ ফায়ার বিগ্রেড সাব ষ্টেশনের লিডার সেলিম উদ্দিন, ঘুমধুম পুলিশের টুআইসি এনায়েত সহ বিপুল সংখ্যক বিজিবি, অগ্নিনির্বাপক দল, পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় লোকজন সনাতন কায়দায় জঙ্গল পিঠিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ সাব ষ্টেশন থেকে পাহাড়ের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে দুটি গাড়ি সহ অগ্নিনির্বাপক দল আসলেও পাহাড়ী দূর্গমতা ও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি গুলো প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে অবস্থান নিতে হয়। এমনিতে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের, বনের গাছ-পালা থেকে ঝড়ে পড়া শুকনো পাতা, সমতলের ছেয়ে পাহাড়ী তাপমাত্রা অধিকতর হওয়া এবং থেমে থেমে বয়ে চলা হালকা-মাঝারি দমকা হাওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে টেকনাফ সাব ষ্টেশনের লিডার সেলিম উদ্দিন জানান। আমতলী বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল বারিক বলেন, আমার ও পার্শ্ববর্তী তুয়াইংগা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ অগ্নিকান্ডস্থল এ ক্যাম্প দু’টোর প্রায় কাছা-কাছি হওয়া, যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় বিজিবি সদস্যরা
নিজেদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। উখিয়ার রাজাপালংয়ে টাইপালং গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নূরুল আমিন (৪০) ও তুলাতলী গ্রামের মৃত অলী ফকিরের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৮) নিজেদের বাগানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে তাদের প্রতিবেশী আব্দুল গফুর সওদাগর জানিয়েছেন। ভয়াবহ অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাতে গিয়ে স্থানীয় আব্দুর রহমান (৪০), ফকির আহমদ (৩৮) আব্দুল নবী (৪৫), নাছির হোসেন (৫৫), সাহাব উদ্দিন (৩০) বাদশা মিয়া (৩০), নূরুল ইসলাম (৩৬), মোহাম্মদ ইসলাম (২৫) আহত হয়েছে বলে ডাঃ ছুরুত আলম জানিয়েছে।
পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সাফায়েত মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম গতকাল বিকাল ৫ টার দিকে বলেন, সীমান্তের ৩৯, ৪০ ও ৪১ নং খুটির মধ্যবর্তী জনৈক অলি ফকিরের ছনখোলা থেকে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সুত্রপাত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দুরে অগ্নিকান্ডস্থল দুর্গম এ পাহাড়ী জনপদে প্রায় ৭ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, অগ্নিনির্বাপক দল ও স্থানীয় লোকজন গতকাল সকাল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবং বাতাসের দমকা থাকায় আগুন ৪০ নং সীমান্ত পিলার সংলগ্ন দিয়ে মিয়ানমারের দিকে ধাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ বাগান ও সবজি খামারের মালিক, গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে সার্বক্ষনিক পাহাড়ায় থেকে সনাতন পদ্ধতিতে আগুনের বিস্ততি যাতে গঠতে না পারে সে ব্যাপারে সর্তক থাকতে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার একর সরকারী খাস জমির উপর বিভিন্ন শ্রেণীর সৃজিত বনায়ন ও সবজি ক্ষেত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আশা করছি গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যার মধ্যে আগুন প্রায় পুুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।