হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামেয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতি ও মুহাদ্দিস এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর কৃতি সন্তান মুফতি মোজাফ্ফর আহমদের একমাত্র নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার ৩ মে সকাল ১১টায় পটিয়াস্থ আল জামেয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজার ইমামতি করেন মহেশখালীর আরেক কৃতি সন্তান ও জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল ইসলামিয়া চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী। উল্লেখ্য, এ দু’জন মামাতো-ফুফাতো ভাই। সূত্রে জানা যায়, পটিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হক রহ. এর কবরের পাশেই মরহুমকে সমাহিত করা হয়। মুফতি মোজাফ্ফর আহমদ প্রায় ৫০ বছর ধরে পটিয়ায় শিক্ষকতা করছেন, এর মধ্যে প্রায় ৩০ বছর ধরে বিনা বেতনে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ছাত্রদের মাঝে।
নামাজে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- মরহুমের ছোট ভাই ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার শিক্ষক ড. মাহফুজুর রহমান এবং মরহুমের ভাইপো ও মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ।
এদিকে, আল্লামা মুফতি মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বর্তমান সরকারের বিশেষ দূত ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই), হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীসহ আরো অনেকেই।
উল্লেখ্য, মুফতি মোজাফ্ফর আহমদ ২৪ এপ্রিল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে ১ মে রবিবার রাত থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় ২ মে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইন্তেকালে করেন।
আল্লামা মুফতি মুজাফ্ফর আহমদ রহ.
জন্ম : আল্লামা মুফতি মুজাফ্ফর আহমদ রহ. ১৯৪০ইং সনে কক্সবাজার মহেশখালী থানার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী মু. জহির উদ্দীন।
লেখাপড়া : পারিবারিক দ্বীনি পরিবেশে তিনি ছোটবেলায় গৃহশিক্ষকের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। জামাতে নাহবেমীর পর্যন্ত তিনি মহেশখালী থানার অন্তর্গত জামিয়া আরবিয়া গোরকঘাটায় অধ্যয়ন করেন। অতঃপর জামাতে হেদায়াতুন্নাহু এবং কাফিয়া আশরাফুল উলুম ঝাপুয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। শরহেজামী জামাত থেকে দাওরায়ে হাদীস অতঃপর ফুনুনাতে আলিয়া জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় সমাপ্ত করেন। ঈর্ষণীয় মেধা ও স্মরণশক্তির অধিকারী আল্লামা মুফতি মুজাফ্ফর আহমদ সাহেব প্রতিটি ক্লাসে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তার প্রতি আকাবিরদের স্নেহ, মায়া, ভালবাসা ও সুনজর ছিল। জামিয়ার প্রতিষ্টাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হক রহ.এ র নিকট তাঁর অনেক কিতাব পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে।
অধ্যাপনা : স্বভাবগত প্রচারবিমুখ এই বিদগ্ধ আলেমে দ্বীন কর্মজীবন শুরু করেন সৈয়দপুরের একটি মাদ্রাসায় অধ্যাপনার মাধ্যমে। অতঃপর বগুড়া জামিল মাদ্রাসায় দু’বছর অধ্যাপনা করেন। জামিল মাদ্রাসা থেকে এসে তিনি যথাক্রমে- মাতারবাড়ি আজিজিয়া মাদ্রাসায় দু’বছর এবং ঝাপুয়া মাদ্রাসায় আট বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৫ সাল হতে তিনি মুরব্বিদের নির্দেশে সাড়া দিয়ে জামিয়া পটিয়ায় শিক্ষকতা শুরু করেন। তখন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জামিয়ার একজন খ্যাতিমান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দ্বীর্ঘ সাত বছর তিনি জামিয়ার সহকারী শিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। কয়েক বছর তিনি নাজেমে দারুল ইক্বামা ছিলেন। কয়েক বছর খন্ডকালীন ভারপ্রাপ্ত পরিচালকও ছিলেন। তিনি জামিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও ফতোয়া বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছে প্রায় তিন যুগ ধরে। তিনি দুই একটি ব্যতিত দরসে নেজামীর প্রায় প্রতিটি কিতাবই দরস দিয়েছিলেন।
রাজনীতি : উনি মুত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আধ্যাত্মিকতা : আল্লামা মুফতি মুজাফ্ফর আহমদ রহ. ছাত্রজীবন থেকে আধ্যাত্বিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র কুতুবে জামান হযরত মুফতি আজিজুল হক সাহেব রহ. এর স্নেহ, মায়া ও রূহানী ছত্র-ছায়ায় বেডে উঠেন। মুফতি সাহেবের মৃত্যুর পর শায়খুল আরব ওয়াল আজম শাহ ইউনুস রহ. এর কাছে নিজেকে অর্পন করেন। তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি জীবন কাটিয়েছেন।
মৃত্যু : ২ মে ২০১৭ইং সনে সকাল প্রায় ১০টার দিকে তিনি ইহকাল ত্যাগ করে মাওলার সান্নিধ্য লাভ করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।