মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের পড়ে শোনানো হয়েছে। আর বুধবার থেকেই তাদের ফাঁসির দিন গণনা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী জানান, বুধবার রাতে মুফতি আব্দুল হান্নানের মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছি। তিনি মার্সি পিটিশন করবেন বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বুধবার আমরা তাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছি এবং সেসময় থেকেই ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী তিনি সাতদিনের সময় পাবেন। এখন তিনি সাতদিনের মধ্যে সে আবেদন করবেন কি না তা জানা নেই।
এদিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান জানান, বুধবার রাতে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা এ কারাগারে এসে পৌঁছালে তদের তা পড়ে শোনানো হয়।
তিনি আরো জানান, এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসির রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের কপি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর বুধবার মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী বিপুল প্রাণভিক্ষার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার মত প্রকাশ করেছিলেন।
এছাড়া তার সহযোগী এবং ওই মামলার অপর আসামি শরীফ শাহেদুল বিপুলকে রায় পড়ে শোনানো হলে তিনিও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন বলে জানান। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তারা প্রাণভিক্ষার লিখিত কোনো আবেদন করেননি।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত এবং আনোয়ার চৌধুরীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। পরে গত বছরের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করেন।
আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা রিভিউ করেন। পরে ১৯ মার্চ দেয়া রিভিউ খারিজের রায় মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।