কে বা কারা অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে। কোনো উপায় না দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দেন শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে। অনেক খোঁজাখুজির পরও নিহতের পরিচয় জানতে না পেরে অজ্ঞাত হিসেবেই মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের সময় রীতিমতো চোখ কপালে উঠার মতো অবস্থা চিকিৎসকদের। ওই মরদেহের পেট থেকে একে একে ৫৭টি ইয়াবা ভর্তি পোটলা বের করা হয়।
বুধবার (৩ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে শেরেবাংলা নগর থানার পিএসআই তুহিন বাবু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ১ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে হৃদরোগ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয়, কে বা কারা অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। অজ্ঞাত ওই নারীর (৪০) পরনে ছিল ম্যাক্সি।
উদ্ধারের সময় আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলেও কেউ ওই নারীকে চিনতে পারেনি। পরে নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) নিহত নারীর স্বজনদের কোনো খোঁজ না পেয়ে তার সুরতাহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। পরে বুধবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরের দিকে চিকিৎসক তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। এ সময় চিকিৎসকরা তার পেটের ভেতর থেকে কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো ৫৭টি ইয়াবা ভর্তি পোটলা উদ্ধার করেন। প্রতিটি পোটলায় অন্তত ২৮ থেকে ৩০ পিস ইয়াবা ছিল।
৫৭টি ইয়াবা ভর্তি পোটলার মধ্যে ৫৫টি পোটলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, আর দু’টি পোটলা পরীক্ষার জন্য রেখে দেয় ফরেনসিক বিভাগ।
নিহত নারীর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পিএসআই তুহিন বাবু আরো বলেন, তার শরীরে কোনো প্রকার আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে হৃদরোগ হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মী পুলিশকে জানায়, দুই ব্যক্তি এসে ওই নারীকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা বলে, তিনি আমাদের মা আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে যাচ্ছি, একটু খেয়াল রাইখেন। এরপর তারা আর ফিরে আসেনি।
ওই মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাক্তার সাফি বাংলানিউজকে জানান, ময়নাতদন্তের সময় নিহত নারীর পেট থেকে আমরা টেপ দিয়ে মোড়ানো ছোট ছোট ৫৭টি ইয়াবা ভর্তি পোটলা পেয়েছি। দু’টি পোটলা পরীক্ষার জন্য রেখে বাকি ৫৫টি পুলিশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এতগুলো ইয়াবার পোটলা পেটে থাকার কারণে তার মৃত্যু হতে পারে। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ভিসেরা কিডনি ও লিভার সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, ওই অজ্ঞাত নারীর পেট থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৭ পোটলা ইয়াবা থেকে আমাদের কাছে ৫৫টি পোটলা হস্তান্তর করা হয়েছে। ৫৫টি পোটলায় আমরা মোট ১৫শ’ পিস ইয়াবা পেয়েছি।
নিহতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহ ছবি তোলা হয়েছে। বিস্তারিত তথ্য জানতে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বাংলানিউজ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।