জি এ এম আশেক উল্লাহ অ্যাডভোকেট
তিনি ১৯৩৫ সালে চান্দেরপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্থানীয় মক্তব,ছুরতিয়া আলীম মাদরাসা,চট্টগ্রামের দারূল উলুম আলীয়া মাদরাসা থেকে ১৯৬০ সালে কামিল পাশ করেন। এরপর কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ছুরতিয়া মাদরাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ওই মাদরাসায় পরে সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদরাসায় সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে অবসর নেন। তবে খন্ডকালিন শিক্ষক হিসেবে হাশেমিয়া আলীয়া মাদরাসায় তিনি ২০১১সাল পর্যন্ত পাঠদান করেন। তিনি ছিলেন এক আধ্যাত্মিক পুরুষ। আযান হলে তিনি দ্রুত মসজিদে ছুটে যেতেন। প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান ছাড়াও তিনি মানুষের চরিত্র গঠনে অসামান্য ভুমিকা রেখেছেন। নিজের চিন্তা কর্ম এবং ধন সম্পদ সময় তিনি আল্লাহার রাহে উৎসর্গ করেছেন। তিনি অন্যায়ে বিরুদ্ধে প্রতিবাদি ছিলেন। কোন অন্যায় কাজ দেখলে তিনি চিৎকার দিয়ে তার প্রতিবাদ করতেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি স্ত্রী,চার ছেলে এবং তিন মেয়ের জনক। ছেলে মেয়েদের তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন এবং সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯৬৫ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং কক্সবাজার জেলা জামায়াতের বিভিন্নস্তরে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নামাজে জানাযায় হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের উপস্থিতি তাঁর প্রতি মানুষের ভালবাসার প্রমাণ। জানাযার পূর্বে অনেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম নিয়ে। কক্সবাজার সদর রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন,‘ মওলানা আবদুল গফুর জনপ্রতিনিধিদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং অনুরকনীয় মানুষ ছিলেন। তিনি সেবাকে মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের সীল এবং প্যাড তাঁর পকেটে থাকতো । বিচারপ্রার্থীর বাসায় গিয়ে তিনি বিচার করে দিতেন। গম কিংবা সরকারি বরাদ্দ নিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধির বদমান শুনা যায় কিন্তু মওলানা আবদুল গফুর সাহেবের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিন্দুমাত্র কোন বদনাম শুনা যায়নি।’
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন,‘ তিনি শুধু হাজারো আলেমের নয়,বরং সর্বস্তরের মানুষের প্রেরণা ছিলেন। সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে তিনি কখনও জামায়াত কাজা করতেন না। কুরআন এবং হাদীসে একজন মুমিনের যে সকল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে এর অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য আমি তাঁর জীবনে দেখতে পেয়েছি। তিনি দুনিয়ায় একজন সফলকাম ব্যক্তি এবং আখেরাতেও তিনি আল্লাহর রহমত লাভ করবেন। তিনি একজন সফল জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর কাছে কখনও অহংকার ছিলনা।’ কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বলেন,‘ মওলানা আবদুল গফুরের রাজনৈতিক আদর্শের সাথে আমার মিল ছিলনা তবুও তাঁকে আমি গভীর শ্রদ্ধা করতাম তিনি আমাকে পিতার মত স্নেহ করতেন, খোঁজ খবর নিতেন। ওনি একাধারে মাদরাসার শিক্ষক,রাজনৈতিক নেতা এবং একজন সফল জনপ্রতিনিধি ছিলেন আমি মনে করি ওনার মৃত্যুতে শুধু জামায়াতের নয়,কক্সবাজারবাসীর অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে।’
পরিশেষে বলতে চাই মহান আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। বেহেশতের উচ্চ মাকাম তাঁকে দান করুন। তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আলোকবর্তিকা তথা অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকুক অযুত- সহস্র বছর। আমীন।
জি এ এম আশেক উল্লাহ অ্যাডভোকেট, ০৩ জুন ২০২২
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।