বাংলা সিনেমা ম্যাডাম ফুলি। সিনেমা জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি সিনেমার নাম। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত এ সিনেমা ওই সময় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল চলচিত্রপ্রেমীদের মাঝে। তবে এবার কিন্তু ম্যাডাম ফুলি নয়। এবার ম্যাডাম রেবি। তার পুরো নাম রেজিয়া আক্তার রেবি। সে উখিয়া-টেকনাফে সিনেমার জন্য আলোচিত নয়। সে আলোচিত মানব পাচারের জন্য। যাকে সবাই কক্সবাজার জেলার শীর্ষ মানব পাচারকারী হিসেবে এক নামে চেনে। রেবির গ্রামের বাড়ি উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামে। সে নুরুল কবিরের স্ত্রী। আর সে-ই হচ্ছে আজকের রেবি ম্যাডাম। মানব পাচারকারী হিসেবে পুলিশের খাতায় রয়েছে তার নাম। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের রয়েছে তার আশীর্বাদ। আর এ সুবাদেই গ্রেপ্তার হলেও বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে সে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২১শে জানুয়ারি রেবি ম্যাডামকে মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে ২০১৪ সালের ২৩শে নভেম্বর একই কারণে কক্সবাজার আদালতপাড়া থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হয় সে। ওই সময় পুলিশ তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে উদ্ধার করে ৮৪ ও ২৭ লাখ টাকার ২টি চেক। এ সময় তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা করা হয়। কিন্তু বারবার আইনের ফাঁকফোঁকর গলে বেরিয়ে এসে আবার জড়িয়ে পড়ে মানব পাচারে। সে এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। শুধুমাত্র তার নেতৃত্বে রয়েছে ৫০ সদস্যের একটি মানব পাচাকারী দল। একসময় জীবনবীমা কোম্পানিতে চাকরি করতো রেজিয়া আক্তার রেবি। কৃষক স্বামী নুরুল কবিরের টানাপড়েনের সংসারে কষ্টে দিনাতিপাত করতো। বর্তমানে মানব পাচার করে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্সসহ বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রশিক্ষিত ৫০ মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় রয়েছে মানব পাচারের ৩টি মামলা। এছাড়াও কক্সবাজার সদর থানায় রয়েছে ২টি মামলা। তার স্বামী নুরুল কবিরের বিরুদ্ধেও রয়েছে মানব পাচারের ৬টি মামলা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, তার পরিবারের সবাই মানব পাচার কাজে জড়িত। রেবি দম্ভোক্তি করে বলে বেড়ায়, থানার ওসি আমার গায়ের কেশও নড়াতে পারবে না। ওসি আমার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকে। কক্সবাজারের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক। পুলিশের স্তরে স্তরে নিজের লোক থাকায় শীর্ষস্থানীয় মানব পাচারকারী হয়েও বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সে। যারা তার মানব পাচারে বিরোধিতা করেন তাদের ওপর তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। লেলিয়ে দেয় তার ক্যাডারবাহিনী। এমনি একটি ঘটনা- গত বছরের ১৭ই ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মানব পাচারের তথ্য প্রকাশের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে রেবি ম্যাডামের নেতৃত্বে ২০-৩০ জনের এক ক্যাডারবাহিনী সোনারপাড়া বাজারে উপজেলা মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদের মালিকানাধীন ওষুধের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। হামলায় আহত হন স্বয়ং আবদুল হামিদ। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় আবদুল হামিদ রেবি ম্যাডামসহ ১১ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও রেবি ম্যাডামের প্রভাবের কারণে তা থমকে আছে। ম্যাডামের নেতৃত্বে মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের মধ্যে সোনারপাড়ার কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ির মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনারপাড়ার অজিউল্যাহর ছেলে কাউছার জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ির আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আবদুল্ল্যাহ, আবদুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামসু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল্ল্যাহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, সোনার পাড়ার জমির আহম্মদ প্রকাশ কালা জমির, সোনাইছড়ি গ্রামের শফি আলম, জমির আহম্মদ, শামসুল আলম সোহাগ, লম্বরীর ছৈয়দ আলম তাবাইয়া, লাল বেলাল, রূপপতি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জমির মিয়া, চোয়াংখালীর মোজাম্মেল হক, ইউপি মেম্বার জাহেদ, বেলাল মেম্বার, ফয়েজ আহমদ, আবুল কালাম, রফিকুল হুদা, সোলতান মেম্বার, মোসলেম উদ্দিন অন্যতম।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী জানান, রেবি ম্যাডাম আমাদের এলাকার জন্য অভিশাপ। তাকে গ্রেপ্তার করা হলে এলাকা শান্ত হয়ে যাবে। তার কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এ ব্যাপারে উখিয়া সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, শুধু ম্যাডাম রেবি নয়, যাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যতবড় প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।