শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ানতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু নিয়ে সংলাপের পুরনো দাবি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। চলমান পরিস্থিতি নিরসনে সংলাপের নতুন এই আওয়াজ তুলেছেন বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। বার বার সংলাপের দাবি করে আসছে সরকারের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপিও। সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদও কথা বলেছেন। গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আলোচনা বা সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কমাতে পারে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।’ এরপর সংলাপ শব্দটি নতুন করে অর্থবহ হয়ে উঠে বিভিন্ন মহলে।
তবে নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচন ইস্যু নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা একেবারেই নাকচ করে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা মানে বিএনপিকে বাঁচানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া। নীতি-নির্ধারকরা আরও বলছেন, ইসি গঠন নিয়ে বিএনপি সংলাপ চেয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংলাপের আয়োজন করেছেন। বিএনপিসহ নিবন্ধিত প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলের পরামর্শও গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এরপর বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা মানে তাদেরকে খাদের কিনারা থেকে তুলে আনার মতো। তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা। আর এ দায়িত্ব আওয়ামী লীগের না। বিএনপি জনগণের জন্যে, গণতন্ত্রের জন্যে রাজনীতি করলে নির্বাচনে আসবে। সংলাপ করে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার পক্ষে নয় আওয়ামী লীগ।
উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য বলেন, এই মুহুর্তে বিএনপি সংলাপের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে কারণ, তারা মনে করে রাজনীতিতে ফিরে আসতে হলে সরকারের সঙ্গে একটি সংলাপ তাদের জন্যে জরুরি। যার ফলে দর কষাকষি করে কিছু আদায় করা সম্ভব হবে। তাই সংলাপ চায় বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ মনে করে সংলাপে বসলে বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে চাঙ্গা হবে, কৌশলের রাজনীতিতেও এগিয়ে যাবে। সংলাপে জড়িয়ে বিএনপিকে এই সুযোগ কোনোভাবেই করে দেওয়া যায় না।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর তিন জন নেতা বলেন, সংলাপ হোক বা না হোক বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। তাই সংলাপ করে তাদেরকে নির্বাচনে আসার সুযোগ আওয়ামী লীগ কেন করে দেবে?
জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা বলছেন, সংলাপের কথা, তারা নিজেরাও জানেন না কী কারণে সংলাপে বসতে হবে। তিনি বলেন, সব কিছু ভালমতো চলছে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তাহলে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা কোথায়? তবে ‘আলোচনা বা সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কমাতে পারে’ রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য সমর্থন করে জাফরউল্যাহ বলেন, রাজনীতিতে সংলাপ থাকলে সমঝোতা ভালো থাকে। গণতন্ত্রকে মজবুত করার জন্যেই হয়ত রাষ্ট্রপতি সমঝোতার কথা বলেছেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও মনে করেন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা মানে তাদের পুনরুজ্জীবিত করা। কিন্তু, তাদেরকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের নয়। ওই নেতারা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার সভায় সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংলাপে বসে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার মতো কোনও ইচ্ছা আওয়ামী লীগের নেই।’ তিনি বলেন, ‘সব কিছু ঠিক-ঠাক চলছে। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। তাহলে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা কোথায়?’ মতিয়া বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, লুটপাট করেছে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসা কতখানি যৌক্তিক হবে, জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হবে এগুলোও আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিএনপির রাজনীতি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, দেশের মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা, দুর্নীতি, লুটপাট করা। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কেন বসবে? তিনি আরও বলেন, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসা মানে বিএনপির ভেতরে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা। আওয়ামী লীগ সে দায়িত্ব কেন নেবে? বিএনপি সংলাপ করতে চাইলে তাদেরকে অতীতের সব কর্মকাণ্ডের জন্যে প্রকাশ্যে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ ভেবে দেখবে সংলাপে বসা যায় কিনা। বাংলাট্রিবিউন
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।