চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এপ্রিলের ২৩ কিংবা ২৪ তারিখ থেকে রোজা শুরু হতে পারে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যবারের মতো প্রস্তুত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পায়তারা ও অবৈধ মজুত রোধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ সভা করেছে বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যসচিব। মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী—বিশেষ করে চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, খেজুরসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ, চাহিদা ও মজুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব পণ্যের সরবরাহ নিয়ে কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। এ কারণে আগে থেকেই চাহিদা ও মজুতের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রোজাকে সামনে রেখে ৩০ হাজার টন সয়াবিন তেল ও ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব খাদ্যপণ্য আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয়ের মাধ্যমে চিনি ও সয়াবিন তেল সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসব পণ্য টেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর মাধ্যমে খোলা বাজারে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে বিক্রি করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পেঁয়াজ বিক্রির চলমান কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, বাজারে সব ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করবে মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ১৯টি মনিটরিং টিম সাজানো হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এসব মনিটরিং কমিটির সারাবছর বাজার মনিটরিং করার কথা খাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়তো হয়ে ওঠে না বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। তবে রোজার সময় পুরো টিমই বাজারে থাকবে। এর সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বেও বাজার মনিটরিং চলবে। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অপর সংস্থা-বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্যোগেও মনিটরিং চলবে।
জানা গেছে, পণ্যের চাহিদা, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি দেখতে ইতোমধ্যেই বাজারে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। অবৈধ মুনাফালোভী, মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের এ তৎপরতা বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। তবে রোজার সময় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কঠোরভাবে মূল্য পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ও রোজার মাসে আরও আড়াই লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। বছরে চিনির চাহিদা ১৬ লাখ মেট্রিক টন। রমজান মাসে অতিরিক্ত প্রয়োজন হয় আরও ৩ লাখ মেট্রিক টন। সর্বমোট বছরে চিনির চাহিদা ১৯ লাখ মেট্রিক টন। বছরে ছোলার চাহিদা এক লাখ মেট্রিক টন ও রোজার মাসে আরও ৮০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার প্রয়োজন হয়। বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ২৩ লাখ টনের কিছু কম-বেশি। কিন্তু দ্রব্যটি পচনশীল বলে উৎপাদনের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পচে যায়। এর পরিমাণ ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টন। এই সাড়ে ৭ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতেই আমদানি করা হয় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, কোনোভাবেই রোজার সময় অনৈতিক কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং চলবে। কোথাও অসামঞ্জস্য কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শবেবরাতের পর থেকেই বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
তিনি জানান, রোজা শুরুর আগে থেকেই টিসিবির মাধ্যমে চিনি, ছোলা, তেল, পেঁয়াজ ও খেজুর স্বল্পমূল্যে ট্রাকে করে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করা হবে।
এদিকে, রাজধানীর কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম লালমিয়া জানান, রোজা উপলক্ষে সব পণ্যেরই চাহিদা বাড়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। রোজার সময় পণ্যের সরবরাহও বাড়ে। এবারও এর ব্যত্যয় হবে বলে মনে হয় না।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।