রামু উপজেলায় নানান ঘটনায় সমালোচিত ও বির্তকিত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কর্তৃক সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধির উপর ধারাবাহিক হামলার পর এবার তিনি নিজেই এক সংবাদকর্মীকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় জড়ালেন। গতকাল বুধবার সকাল ১২টায় রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের আয়োজিত একটি সরকারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার সামনেই এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ২৯ এপ্রিল সকাল ১২টায় কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রামু উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্ধারিত মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতীয় দৈনিক সংবাদ ও স্থানীয় দৈনিক আজকের কক্সবাজার পত্রিকার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন অর্তকিত অবস্থায় হলরুমে প্রবেশ করে সংবাদকর্মী হাফিজুল ইসলামকে লাঞ্চিত করা শুরু করে। এক পর্যায়ে তিনি সংবাদকর্মী হাফিজকে ধাক্কা দিয়ে হলরুম থেকে বের করে দেন। ঘটনার সময় উপস্থিত জনসাধারণ হতভাগ হয়ে চেয়ারম্যানের নির্লজ্য ঘটনা প্রত্যাক্ষ করেন। চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ‘পরিষদ তাঁর নিজের সম্পত্তি’ দাবী করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় এ হামলা করছেন বলে প্রকাশ্যে উপস্থিত জনতাকে জানান।
পরে তিনি হলরুমে পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন- সংবাদকর্মী হাফিজুল ইসলাম পরিবেশ ধ্বংস সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা করিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি হামলা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের আপন লোক দাবী করে কেউ কিছুই করতে পারবে না বলে সংবাদকর্মীদের হুসিয়ারী দেন।
ঘটনার সময় সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী কায়দায় হামলার ঘটনা থেকে ওই সংবাদকর্মীকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। এ ঘটনায় সংবাদকর্মী হাফিজুল ইসলাম রামু থানা অফিসার ইনচার্জকে ঘটনার বিষয় অবহিত করেছেন।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কচ্ছপিয়ায় একটি বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মাইকে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সর্তক করে হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পায়।
এদিকে সরকারী অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীকে লাঞ্চিত করে হলরুম থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু ও কক্সবাজারের সাংবাদিক মহল। ঘটনার সুষ্ট বিচার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তড়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানিয়ে তাৎক্ষনিক বিবৃতি দিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাবের উপদেষ্ঠা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক তসলিম ইকবাল চৌধুরী, মাঈনুদ্দিন খালেদ, প্রেসক্লাব সভাপতি ইফসান খান ইমন, সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ, আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক শামীম ইকবাল চৌধুরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন টুক্কু, দপ্তর সম্পাদক এম আবু শাহমা, অর্থ সম্পাদক মো: ইউনুছ, সদস্য মো: শাহিন প্রমুখ।
এছাড়াও ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দৈনিক সকালের কক্সবাজার নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম, দৈনিক দিনকাল প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম কাজল, দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিনিধি আবুল বাশার নয়ন, দৈনিক সংগ্রাম প্রতিনিধি মাহামুদুল হক বাহাদুর, দৈনিক সাগর দেশ প্রতিনিধি মো: তৈয়ব উল্লাহ, দৈনিক হিমছড়ি বাইশারী প্রতিনিধি মুফিজুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নুরুল আমিন ইতিপূর্বে দোবাইতে অবৈধ ব্যবসায় অভিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরত এসে তৎসময়ের কক্সবাজার-৩ আসনের বিএনপির সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মো: শহিদুজ্জামান এর হাত ধরে জনপ্রতিনিধির তালিকায় নাম লেখান। সেসময় একজন সামান্য প্রাবাসী হয়ে মো: শহিদুজ্জামানকে তাঁর টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করানোর বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। পরে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি দলবদল করে নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য কৌশলে রামু-কক্সবাজার আসনের বর্তমান সাংসদের আস্থাভাজন হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে সামর্থ্য হওয়ার পাশাপাশি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের উপরও তিনি নিজেই হামলা করে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ তিনি কচ্ছপিয়া-মহিষকুম এলাকায় সরকারী পাহাড় ও বনাঞ্চল নিধন করার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ৪লাখ টাকায় জরিমানায় দন্ডিত এবং বন বিভাগের মামলার আসামী হন। এ কারনেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন সংবাদকর্মীদের উপর। যার ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার নিজের মনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটান সংবাদকর্মী হাফিজুল ইসলাম চৌধুরীর উপর।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।