#গরু পাচারকে কেন্দ্র করে ফের খুন
# পুলিশের বিরুদ্ধে বখরা আদায়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের রামুতে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দেদারসে আসছে চোরাই গরু। আর এসব গরু পাচারে সহযোগিতা করে আসছে পুলিশ। আর এসব বার্মিজ গরু পাচারকে কেন্দ্র করে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড বড়বিল এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো একজন। নিহত আবুল কাশেম (৪৪) গর্জনিয়ার ১নম্বর ওয়ার্ড বড়বিলের মৃত আলী আহমদ প্রকাশ পুতিন্নার ছেলে।
আহত মনির আহমদ (৪০) রামুর গর্জনিয়ার জুমছড়ির মৃত আলী মদনের ছেলে। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এনিয়ে গরু পাচারকে কেন্দ্র করে ২ মাসে উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে বাবা-ছেলেসহ চারজন খুন হয়েছেন।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে আনা গরু বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রামুর গর্জনিয়া-জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বড়বিল নাঈম্মারঘোনা এবং জোয়ারিয়ানালার মালাপাড়া সেগুন বাগান এলাকার ডাকাত শাহীনের শ্রমিকরা রাতের অন্ধকারে গর্জনিয়া সীমান্ত পার করছিল। এসময় গরু পাচারে নিয়োজিত শ্রমিক (গরু টানা পার্টি) স্থানীয় ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাত দলের সদস্যরা গরু পাচার করা শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরুগুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে গরু টানা শ্রমিকদের সাথে ডাকাতদলের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলিতে গুরু পাচারে নিয়োজিত শ্রমিকদের একজন নিহত হন। আহত হন আরো একজন শ্রমিক।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, ডাকাত শাহিনের মাধ্যমে পাচারকৃত গরুগুলো গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া এলাকা হতে জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন অংশে পৌঁছে দেয়া হয়। সেখানে গরুগুলো গ্রহণ করে, জোয়ারিয়ানালার অংশের চোরাকারবারি সিন্ডিকেট নেতা শাকিল আদনান, একই এলাকার তারেক মিশুর নেতৃত্বে সদস্যরা। এ সিন্ডিকেট কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু অংশে গরু নির্বিঘ্নে পারাপারের ব্যবস্থা করে থাকেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। হত্যাকান্ডে কারা জড়িত সেটি যাচাই ও তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান বলেন, সকালে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের মরদেহ আনা হয়েছে। সাথে আনা হয়েছে আহত আরো একজনকে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, রামু-নাইক্যংছড়ি সীমান্ত পারের পর গরু নিয়ে বারবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রামুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সচেতন মহল। দিনদিন আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়াতে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মাইষকুম ব্রীজ আর রামু চা- বাগান নাইক্ষ্যংছড়ি যাওয়ার রাস্তার মাথায় প্রতি সোমবার আর বৃহস্পতিবারে প্রকাশ্যে গরু বহনকারী মিনিট্রাক হতে প্রতি গরু হিসাবে টাকা উত্তোলন করে রামু থানা পুলিশ। আর প্রতিদিন রাতে গরু গর্জনিয়া হইতে রামু বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সময় গরু পাচারকারীকে রোড ক্লিয়ার দেয় ওসির বিশ্বস্ত লোক কনস্টেবল মো. আবু বক্কর। মইষকুম এলাকা হইতে নদী পথে মনিরঝিল এলাকার পাহাড়ে দিনের বেলায় গরু রাখে এবং ওসির নির্দেশনা আর সময় মতো গরু বাহির করে। যেদিন বেশি গরু রামু থেকে পাচার হয় তখন ওসি নিজেই গরুগুলো রামু থানা এলাকার বাহিরে না যাওয়া পযন্ত বাহিরে থাকেন। যাতে ডিউটিরত কোন অফিসার ওই গরু আটক করতে না পারে। অভিযোগে প্রকাশ, ওসির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এসআই আবুল কাওসার ও এসআই আল আমিন গরু পাচারকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে থাকেন।
গত কয়েকদিনে রামু উপজেলায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাওসার ও মো. আল আমিনের নেতৃত্বে ‘সিভিল টিম’ রয়েছে। দিনের বেলায় ওই টিমের সদস্যরা অনেকটা ‘রুমবন্ধী’ থাকেন। সন্ধ্যা হলেই সাদা পোশাকে নেমে পড়েন রামুর কয়েকটি পয়েন্টে। বিশেষ করে প্রতি সোম- বৃহস্পতিবার সপ্তাহিক গরুর হাট। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রবেশদ্বার (চা বাগান) সহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গরু বহনকারী যানবাহন আটকিয়ে টাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এছাড়া মিয়ানমারের সিগারেট পাচারে সহযোগিতা করে আসছে এই সিন্ডিকেট।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান চোরাই গরু পাচারে পুলিশী সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।