নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের মধ্যম বাইশারী জামে মসজিদের পুরাতন কাজ নিয়ে এনজিও সংস্থা আল নজির ফাউন্ডেশনের ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ না করলেও বাস্তবতা স্বীকার করতে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কেউ অপারগতা প্রকাশ করেনি।
আল নজির ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন যাবত রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী এলাকায় সন্দেহ জনক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণের নামে একাধিক মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে চাদাঁবাজি করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সনে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের মধ্যম বাইশারী জামে মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎসময়ের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিসেস মাম্যাচিং ২৭ জানুয়ারী ২০০৬ইং এ কাজের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। যেটির নাম ফলক বর্তমানেও মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে বহাল রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের অসমাপ্ত ছাদ ঢালাই কাজ নিজস্ব ফান্ডের প্রায় ৮-৯লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে মসজিদ পরিচালনা কমিটি।
কিন্তু সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার ইসলামিক এনজিও আল নজির ফাউন্ডেশন (৩২৪/০৮) এই মসজিদের একটি বারান্দা নির্মাণ ও প্লাষ্টার শেষে জেলা পরিষদের পূর্বের কাজসহ সম্পূর্ণ কাজের মালিক বনে গেছেন। এজন্য তারা এনজিওটির পক্ষ থেকে মসজিদের সামনের অংশে বাস্তবায়নকারী হিসেবে বাংলা ও আরবী অক্ষরে লিখা একটি নাম ফলকও লাগানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন- বিগত সরকার আমলে জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৫লক্ষ টাকায় মসজিদের ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়। এছাড়াও মসজিদের নিজস্ব ফান্ড থেকে ছাদ ঢালাই ও অন্যান্য কাজে প্রায় ৮-৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন তারা। বর্তমানে অসম্পূর্ণ বারান্দা নির্মাণ, পশ্চিম পার্শ্বে দেওয়াল প্লাস্টার ও গ্লাস স্থাপনের জন্য আল নজির ফাউন্ডেশন ৩লক্ষ টাকার কাজ করে যাচ্ছে এবং এই এনজিও‘র ফলক মসজিদের সম্মুখে স্থাপন করার কথা তিনি স্বীকার করেন।
জানা গেছে, আল নজির ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এলাকায় রিংওয়েল স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়ে এলাকার মানুষের কাছ থেকে প্রতিটি রিংওয়েলের জন্য ৩হাজার টাকা করে আদায় করে থাকেন। এছাড়াও আল নজির ফাউন্ডেশন যৌথ খামার, হরিন খাইয়া, থোয়াঙ্গাকাটা, ছাগলখাইয়া, শাহ মোহাম্মদ পাড়া, আলী বাপের ব্রিজ ঘাটসহ অসংখ্য মসজিদ নিমাণের নামে পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের অর্থ চাদাঁবাজি করেছে বলে জানান রামু উপজেলার বড়বিল এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলম, আব্বাস, ডা: আক্তার, আবদু সামাদ, সংবাদিক ইয়াহিয়া চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানান, এই এনজিটি অন্যের মসজিদ-মাদারাসা নির্মাণ ও সংষ্কারের কথা বলে আসলেও তাদের প্রতিষ্ঠাতা আল নজির ফাউন্ডেশনের নিজস্ব বড়বিল এমদাদিয়া মাদরাসাটি পর্যন্ত এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি। যার কারনে এ প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে একাধিক অভিযোগও দিয়েছেন স্থানীয়রা।
মধ্যম বাইশারী জামে মসজিদের কাজের বিষয়ে আল নজির ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মাহামুদুল হাসান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মসজিদের জন্য ৭লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে কমিটির অনুমতিক্রমে নাম ফলক লাগানোর কথা স্বীকার করেন। তবে মসজিদ কমিটির দেওয়া তথ্য ও এনজিও’র তথ্যের ব্যাপক গড়মিল থাকার বিষয়টি এ প্রতিবেদক উল্লেখ করলে স্থানীয় দুই সাংবাদিকের সাথে এ প্রতিবেদককে যোগাযোগ করতে বলে কাজের ব্যস্থতা দেখিয়ে তিনি মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন। আল নজির ফাউন্ডেশন নামে এই এনজিওটি রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা জামে মসজিদসহ অসংখ্য কাজে একই কায়দা অবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আল নজির ফাউন্ডেশন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন ইসলামীক রাষ্ট্র থেকে যাকাত, ফেতরা, ধর্মীয় শিক্ষার নামে বিপুল অর্থ এনে নামে মাত্র খরচ করছে। তারা স্থানীয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মসজিদ সংষ্কার, বসতবাড়ি নির্মানে সহায়তা, ইফতার পাটি, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ কতিথ দান খয়রাত করে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজে এগিয়ে আসার জন্য আল নজির ফাউন্ডেশন প্রশংসার দাবীদার হলেও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ফটো শেসন ও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া খুবই দুখজনক। এই এনজিওটির অর্থ যোগানসহ অন্যন্য বিষয়াদি উর্দ্ধতন প্রশাসন কর্তৃক সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।