কয়েক মাস আগের ঘটনা। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল ব্রাজিল। কেউ কেউ বলছিল, তাহলে কী এই প্রথম ব্রাজিলকে ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল!
কার্লোস দুঙ্গার অধীনে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে পয়েন্ট টেবিলে ৬ষ্ঠ নম্বরে ছিল সেলেসাওরা। অপরদিকে তখন লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। একের পর এক জয়, তরতর করে রাশিয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল লা আলবেসেলেস্তারা।
কয়েক মাসের ব্যবধানে চিত্রটা পুরোপুরি উল্টো। একেবারে রিভার্স। সেই ব্রাজিল এখন ১১ ম্যাচ শেষে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে শীর্ষে। অপরদিকে ১১ ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ঠিক ৬ নম্বরে রয়েছে আর্জেন্টিনা। মেসির ইনজুরির সুযোগে আর্জেন্টিনাকে তাদেরই ঘরের মাঠে হারিয়েছে গেছে ইকুয়েডর আর পেরুর মত দলগুলো।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে শীর্ষ চারটি দল। পঞ্চম দল প্লে অফ খেলার সুযোগ পাবে। প্লে অফ থেকে হয়তো লাতিন আমেরিকার পঞ্চম দল হিসেবে কেউ যেতে পারবে বিশ্বকাপে। সে হিসেবে পয়েন্ট টেবিলের এখন যে অবস্থা, তাতে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার কোন সম্ভাবনাই নেই বিশ্বকাপে খেলার।
তবে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা সান্তনা খুঁজতে পারেন। কারণ, এখনও নিশ্চিত হয়ে যায়নি, কে খেলবে বিশ্বকাপের আসরে। কারণ, এখনও ৭টি করে বাছাই পর্বের ম্যাচ বাকি রয়েছে। এই ৭ ম্যাচে গনেশ উল্টেও যেতে পারে। মেসির আর্জেন্টিনা তখন দেখা যাবে, অনেক ভালো অবস্থানে থেকেই বিশ্বকাপে খেলবে।
তবে তার আগে ব্রাজিলের কাছে হেরেও পয়েন্ট টেবিলে সাত নম্বরে যাওয়া থেকে বেঁচে গেছে আর্জেন্টিনা। কারণ, তাদের আশা বাঁচিয়ে রাখলো পেরু। লতিন আমেরিকা বাছাই পর্বের অন্য ম্যাচে নিজেদের মাঠে ১০ মিনিটে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ে। তবুও অদ্ভুতভাবে ৯০ মিনিট শেষে ৪-১ গোলে পেরুর কাছে হেরে গেলো তারা। ৭০ মিনিট পর্যন্ত যে ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ১-১, সেখানে এই অপ্রত্যাশিত জয়ে পেরু সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিল আর্জেন্তিনাকেই।
mess
প্যারাগুয়ে জিতে গেলে দশ দলের মধ্যে আর্জেন্টিনার জায়গা হতো সাত নম্বরে। ১১ ম্যাচে মাত্র ৪ জয় আর চার ড্রয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত ছয়ে আছে আর্জেন্তিনা। তবে তিন নম্বরে থাকা কলম্বিয়ার সঙ্গে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র দুই। চার ও পাঁচে থাকা ইকুয়েডর এবং চিলিও বেশি দূরে নেই। মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে। এটা যদি আর্জেন্টিনার জন্য স্বস্তি হয়, তাহলে অস্বস্তিও আছে। সাত আর আটে থাকা প্যারাগুয়ে-পেরুও কিন্তু আর্জেন্তিনার চেয়ে বেশি পিছিয়ে নেই।
প্যারাগুয়ের পয়েন্ট ১৫, পেরুর ১৪। আর্জেন্টিনার চেয়ে এই দুই দল পিছিয়ে আছে যথাক্রমে ১ ও ২ পয়েন্টে। ফলে একটি জয়-পরাজয়ই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাই পর্বের টেবিলের চিত্রটা পুরো উল্টে-পাল্টে দিতে পারে।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে প্রতিটি দল ১৮টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় বাছাই পর্বে। ফলে এখনও পথ অনেক দীর্ঘ। সাত ম্যাচ বাকি। অর্থ্যাৎ পুরো ২১ পয়েন্টের হিসাব-নিকাশ এখনও বাকি। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের বর্তমান চেহারা আর টানা চার ম্যাচ জয়শূন্য আর্জেন্টিনার একটুও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই।
মেসি থাকলেও আর্জেন্টিনা এখন কতটা কী করে সেটাই দেখার বিষয়। না হলয়, ঘুরে-ফিরে বারবার আসছে ১৯৭০ বিশ্বকাপ। যে বার চূড়ান্ত পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল আর্জেন্টাইনরা। প্রথম দুই বিশ্বকাপ খেলার পর পরের তিন আসরে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া, ১৯৫৮ বিশ্বকাপ দিয়ে আবারও ফিরে আসা আর্জেন্তিনা ওই একবারই বাছাই পর্বে ছিটকে পড়েছিল।
ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হারের পর আবার আর্জেন্টিনাহীন বিশ্বকাপের শঙ্কা তৈরি হয়ে গেছে। শঙ্কা বাড়ছে মেসিহীন বিশ্বকাপেরও।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।