আগেরদিনই জিনেদিন জিদান তার শিষ্যদের বলে দিয়েছিলেন, ‘মনে করতে হবে এই ম্যাচে ফিরতি লেগ বলে কিছু নেই। ফাইনালে ওঠার জন্য যা করার প্রয়োজন প্রথম ম্যাচেই করে ফেলতে হবে। ফিরতি লেগের জন্য অপেক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই।’
কোচের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা। বিশেষ করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ঘরের মাঠে আবারও তিনি প্রমাণ করে দিলেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তিনি করলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। খেলার ১০, ৭৩ এবং ৮৬ মিনিটে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন রিয়ালের পর্তুগিজ সুপারস্টার।
তার এই হ্যাটট্রিকে অ্যাটলেটিকোকে মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলতে হলে ফিরতি লেগে ৪-০ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে অ্যাটলেটিকোকে। যা রীতিমত অসম্ভব। সুতরাং বলাই যায়, ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল রিয়াল মাদ্রিদ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন রোনালদো। তাও রিয়ালের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। এর আগের ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগ। সেই ম্যাচেও হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। ছুঁয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শততম গোলের মাইলফলক। আজ সেটিকে বাড়িয়ে নিলেন আরও তিনটি। অথ্যাৎ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রোনালদোর গোল এখন ১০৩টি। আর এবারের আসরে গোল করলেন ১০টি। একই সঙ্গে রিয়ালের হয়ে ৪২তম এবং পুরো ক্যারিয়ারে ৪৭তম হ্যাটট্রিক পূরণ করলেন সিআর সেভেন।
ম্যাচের শুরুতে অ্যাটলেটিকোর দারুণ নিয়ন্ত্রন ছিল ম্যাচে। তবে সেটা প্রথম ৫ মিনিট। এরপরই একতরফা খেলতে শুরু করলো রিয়াল মাদ্রিদ। বলতে গেলে অ্যাটলেটিকোকে তো কোনো সুযোগই তারা তৈরি করতে পারেনি। অপরদিকে এক তরফা খেলার পরও গোল মাত্র ৩টি রিয়ালের। এর কারণ করিম বেনজেমার অসংখ্য মিস। বেনজেমা যে কয়টা মিস করেছেন তার ২০ ভাগ গোল হলেও আজ ভেসে যেতো অ্যাটলেটিকো।
খেলার ৪ মিনিটে রাফায়েল ভারানের কাছ থেকে বল পেয়ে পোস্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন রোনালদো। খেলার সপ্তম মিনিটে পরপর দুটি সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। প্রথমে ইসকোর কাছ থেকে বল পেয়ে দানি কারভাহল এক কোন থেকে শট নেন। সেটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক ওব্ল্যাক। ফিরতি বলে গোলের একেবারে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন করিম বেনজেমা। বলতে গেলে পুরো ফাঁকা জাল; কিন্তু এমন সুযোগও মিস করেন তিনি। বলটা পাঠিয়ে দেন বাইরে।
গোলের জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি রিয়ালকে। সার্জিও রামোস থেকে কাসেমিরোর একটি দারুণ চেষ্টা ফিরিয়ে দেন অ্যাটলেটিকো ডিফেন্ডাররা। বল চলে আসে আবার কাসেমিরোর পায়ে। তার ক্রস সোজা চলে যায় রোনালদোর মাথায় দারুণ এক হেডে সেটিকেই জালে জড়িয়ে দেন সিআর সেভেন।
খেলার ১৬তম মিনিটে অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক নিশ্চিত একটি গোল বাঁচিয়ে দেন। কর্ণার কিক থেকে ভেসে আসা বলে এ সময় বুলেট গতির এক হেড নেন রাফাযেল ভারানে; কিন্তু ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্ণারের বিনিময়ে সেটি রক্ষা করেন ওব্ল্যাক।
১৭তম মিনিটেই প্রথম গোলের সুযোগটি তৈরি করেছিলো অ্যাটলেটিকো। রিয়াল ডিফেন্ডার ভারানেকে ফাঁকি দিয়ে বল বের করে ফেলেছিলেন কোকে। স্লাইড করে বল এগিয়ে দিলে গ্যামেইরোর কাছে চলে যায় বল। কিন্তু রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস অসাধারণ দক্ষতায় বলটি ফিরিয়ে দেন। তাতে শেষ হয়ে যায় অ্যাটলেটিকোর স্বপ্ন। পুরো ম্যাচে কার্যকর একটি চেষ্টা ছিল ওটিই। যদিও তা ব্যর্থ হলো।
মুহূর্ত পরেই টনি ক্রুসের কাছ থেকে বল পেয়ে ইসকোর একটি শট ফিরে আসে রক্ষণভাগ থেকে। পরের মিনিটেই রোনালদোর কাছ থেকে বল পেয়ে করিম বেনজেমার একটি গোলের দারুণ সুযোগ ঠেকিয়ে দেয় অ্যাটলেটিকো রক্ষণভাগ। ২০ মিনিটেই দানি কারভাহলের কাছ থেকে বল পেয়ে গোলের আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন বেনজেমা। সেটিও ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
২৪ মিনিটে লুকা মডরিচের একটি দারুণ শর্ট চলে গিয়েছিল একেবারে সাইড বার ঘেঁষে। ২৯ মিনিটে আরেকটি গোলের সুযোগ মিস করেন করিম বেনজেমা। ৩২ মিনিটে অ্যাটলেটিকোও মিস করে দারুণ একটি গোলের সুযোগ। আন্তোনিও গ্রিজম্যানের ফ্রি কিক থেকে ভেসে বলে পা লাগিয়েছিলেন গোডিন। গোল হওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে।
এরপর প্রথমার্ধে দু’দল বলতে গেলে কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। ৪৫ মিনিটে কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলটিতে শট নিয়েছিলেন মডরিচ; কিন্তু বারের পাশ দিয়ে বল চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাটলেটিকো মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে থাকে সমতায় ফেরার। চেষ্টা করে কিছু আক্রমণ শানাবার; কিন্তু রিয়ালের ডি বক্সে এসে সব চেষ্টা থমকে দাঁড়ায়। ম্যাচের ৫৭তম মিনিটে সাউল নিগুয়েজের পাস থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন ইয়ানিক ক্যারাসকো; কিন্তু বল চলে যায় বারের ওপর দিয়ে
৬০ মিনিটে কোকে দারুণ একটা শট নিয়েছিলেন রিয়ালের পোস্ট লক্ষ্যে। তবে বলটি বাইরে দিয়ে চলে যায়। এরপর দু’দলই কার্যকর কোনো আক্রমণ শানাতে পারেনি। মাঝ মাঠেই ঘুরেছে বল। ৭৩ মিনিটে গিয়ে গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলেন রোনালদো। মার্সেলোর কাছ থেকে বল পেয়ে নিয়ন্ত্রণ নেন বেনজেমা। দিয়েগো গোডিনকে কাটিয়ে তিনি বল পাস দেন রোনালদোকে। গতিময় বলটিকে থামানোই প্রয়োজন মনে করলেন না সিআর সেভেন। বাতাসে থাকতেই ডান পায়ের বুলেট গতির শট নেন তিনি। ফিলিপ লাস চেষ্টা করেছিলেন ব্লক দেয়ার। কিন্তু ততক্ষণে বল অ্যাটলেটিকোর জালে।
৮৬ মিনিটে আবারও গোল। এবারও রোনালদো। বলটা নিজেই ডি বক্সে নিয়ে এসেছিলেন রোনালদো। সেটি তিনি পাস দেন লুকাস ভাসকুয়েজকে। একেবারে লাইনে দাঁড়িয়ে বলটিকে কাটিয়ে নেন গোডিনের কাছ থেকে। এরপর আবার ব্যাক পাস দেন রোনালদোকে। একেবারে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা পর্তুগিজ তারকা সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থে শট নিলেন এবং জড়িয়ে দিলেন অ্যাটলেটিকোর জালে। পূরণ হয়ে গেলো তার পরপর দুই হ্যাটট্রিক।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।