কক্সবাজার সময় ডেস্কঃ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা একেবারেই ‘অবর্ণনীয়’ এবং ‘অকল্পনীয়’।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দলটি এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানায়। রোববার (১৯ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের সিনেটর জেফরি আলান মার্ক্লের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন সিনেটর রিচার্ড ডারবিন, কংগ্রেসওম্যান বেটি ম্যাককোলাম, জ্যান শকোবস্কি, কংগ্রেসম্যান ডেভিড এন. সিসিলিন, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি ও কমিটির অন্যান্য সদস্যসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
শনিবারই প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে আসে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন এই প্রতিনিধি দলকে তাদের প্রথম বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানান। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস, পররাষ্ট্র দফতর ও আমেরিকান জনগণ বাংলাদেশকে ‘অত্যন্ত প্রবল’ রাজনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ায় প্রতিনিধি দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সংকটের ভার ও তাৎপর্য সরাসরি বুঝতে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করায় প্রতিনিধি দলকে সাধুবাদ জানান মাহমুদ আলী। তিনি এসময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চলতি সপ্তাহের শেষে নিজের মিয়ানমার সফরকালেই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানোর বিষয়ে একটি চুক্তি সই হবে।
সিনেটর মার্ক্লে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, এই প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণে, যেন রোহিঙ্গাদের সফলভাবে স্বদেশে মিয়ানমারে পাঠানোর প্রক্রিয়ার অগ্রগতির লাভ করে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আমি অভিভূত।
নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তায় আন্তরিক সাধুবাদও জানান প্রতিনিধি দলের এ প্রধান।
সাক্ষাতে সিনেটর ডারবিন বলেন, আমরা আজ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যা দেখে এসেছি, তা একেবারে ‘অবর্ণনীয় ও অকল্পনীয়’।
সাক্ষাতে দু’পক্ষই রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে নিরাপদে ও স্থায়ী ভিত্তিতে স্বদেশে ফেরানোর জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে মতৈক্য হয়।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদে রাখাইনে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত সোয়া ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে সংকটের শিগগির সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।