মিয়ানমারকে তার রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিন। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারের কাছে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রত্যাশা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ওআইসির মহাসচিব চার দিনের সফরে গত বুধবার রাতে ঢাকায় এসেছেন। গত নভেম্বরে মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটিই তাঁর প্রথম সফর। তিনি গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি আজ শুক্রবার কক্সবাজারের কুতুপালং শিবির ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করবেন। সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করে তিনি ওআইসির পক্ষ থেকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাবেন। এ ছাড়া তিনি আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল দুপুরে সাক্ষাতের পর ওথাইমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের পরিচয় ও স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।
তাদের অবশ্যই পূর্ণ নাগরিকত্ব ও নিজেদের দেশে ফেরার সুযোগ দিতে হবে। ’
সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে মিয়ানমারকে রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওআইসি সহাসচিব বলেন, ‘আমরা আপনাদের দেশে (মিয়ানমার) আসতে ও আপনাদের সঙ্গে বসতে অত্যন্ত আগ্রহী। আপনারা (মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ) তাদের (রোহিঙ্গা) মৌলিক মানবাধিকার অস্বীকার করতে পারেন না। ’
ওআইসি এ ব্যাপারে চাপ অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে ওথাইমিন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা ও আগ্রহের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে একটি দ্বীপে স্থানান্তরে সরকারি পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ওআইসি মহাসচিব বলেন, এটি খুব ভালো একটি ভাবনা। কারণ সরকার তাদের জন্য একটি ছোট শহর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে, সেখানে সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তারা স্বাভাবিক শহরের মতো সেখানে থাকতে পারবে।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাই ও বোন হিসেবে উল্লেখ করে তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বিষয়ে ওআইসি মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাস গ্রহণযোগ্য নয়। সন্ত্রাসকে কোনোভাবে সমর্থন করা যায় না। তিনি বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। বাংলাদেশ এসব মূল্যবোধ ধারণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ’
ওআইসি অতীতে বাংলাদেশে সব সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এ দেশ ও জনগণের পাশে আছি। ’
বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্ত ধর্মীয় সংলাপ আহ্বান : বাসস জানায়, ওআইসি মহাসচিব গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের মুসলমান ও মিয়ানমারের বৌদ্ধ নেতাদের মধ্যে আন্ত ধর্মীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই সংলাপ নেতৃবৃন্দের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবে। ’
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ওআইসি মহাসচিব অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনি খুব উদার’। এ সময় তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম।
বৈঠকে ওআইসি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, আপনি একজন সফল নেতা এবং বিশ্বে মুসলিম নারীর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ওআইসি বাংলাদেশের নারীদের যেকোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারলে খুশি হবে। ’
বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ওআইসিকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয়ে ড. ইউসেফ বিন আহমাদ আল-ওথাইমিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। এ সময় বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিরোধীদলীয় হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর এবং সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, রওশন আরা মান্নান ও খুরশিদ আরা হক উপস্থিত ছিলেন।
ওআইসি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিষয়টি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, ওআইসিতে বাংলাদেশের ভূমিকা ক্রমেই বাড়ছে। ইসলামী বিশ্ব, মুসলিম উম্মাহ ও ওআইসি ইস্যুগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান ও পরামর্শ সম্পর্কে এ সফরের মধ্য দিয়ে আরো নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সহায়তা কামনা করেছেন। বাংলাদেশ সফররত সংস্থাটির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওসাইমিনের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাসস জানায়, সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি ফিলিস্তিন ও আল-আকসা মসজিদ সমস্যা সমাধানে মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। দেশে চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, মুসলিম উম্মাহর সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে সহায়তা করতে বাংলাদেশ সব সময় প্রস্তুত। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কল্যাণে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি ওআইসি মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।