বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নিবন্ধিত নাগরিক, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং নবাগতদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণে অনতিবিলম্বে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে দেশটি।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সূচির বিশেষ দূত ও দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চাও টিন বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। ১১ জানুয়ারি বুধবার পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেন। এ দিন সন্ধ্যায় মিয়ানমারের বিশেষ দূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিবন্ধিত শরণার্থী, অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক ও নবাগতদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানায় এবং এ লক্ষ্যে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের প্রস্তাব করে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন প্রত্যাশীদের মিয়ানমার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে। মিয়ানমার প্রাথমিকভাবে গত দুই মাসে রাখাইন রাজ্য হতে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারীদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তাদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার দাবি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের নিবন্ধিত শরণার্থী, অনিবন্ধিত এবং নতুন আগত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একইসঙ্গে উদ্যোগ নেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসনকে কার্যকর এবং টেকসই করার জন্য রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ও টেকসই জীবিকার সুযোগ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, যাতে প্রত্যাবাসনকারী নিজ ভূমিতে নিরাপত্তা ও সম্মানসহ স্বাভাবিক জীবিকা অর্জনের সুযোগ পায়। রাখাইন মুসলিমদের প্রান্তিকীকরণ রোধ ও তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় প্রত্যাবাসনকারী সংখ্যালঘুরা পুনরায় ফিরে আসতে পারে বলে বাংলাদেশ মত প্রকাশ করে। এ বিষয়ে সমন্বিত ও সামগ্রিক কর্মপন্থা নির্ধারণের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। দুপক্ষই এ বিষয়ে অনতিবিলম্বে আলোচনা করতে সম্মত হয়।
রাখাইন রাজ্যের ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সশস্ত্র চরমপন্থা বিকাশের সম্ভাবনা উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিশেষ দূত ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সশস্ত্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সহযোগিতা জেয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিশেষ দূতকে অবহিত করা হয় যে, বাংলাদেশ কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিজস্ব ভূমি ব্যবহার করতে দেয় না । প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্মীয় ও জাতিগত উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারকে পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেন।
আবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমার নাগরিকদের এবং রাখাইন মুসলমানদের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি যথাযথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন মোতাবেক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার প্রস্তাব করে। মিয়ানমারের বিশেষ দূত প্রস্তাবটি তার দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে তুলে ধরবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এদিকে এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিয়ানমারের বিশেষ দূত চাও টিনের সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হলে তা দুদেশের মধ্যকার বোঝাপড়া ও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সূচি-কে সব প্রকার সহায়তা ও আশ্বাস পুনব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলোচনায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনাধীন দুইটি সমঝোতা স্মারক (নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা এবং বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস) দ্রুত স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। তাছাড়া উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে দুপক্ষ একমত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমুখ। জাগোনিউজ
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।