বিশেষ প্রতিবেদক:
জাতিংসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হয়েই জান্তা শাসিত মিয়ানমার সফর শেষে এবার বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে পা রাখলেন নোয়েলিন হেইজার।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দিনব্যাপী সময় পার করেন উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে। একান্তে রোহিঙ্গা নারী, শিশু, তরুণ-তরুণী ও ধর্মীয় নেতাদের বৈঠকের পাশাপাশি ঘুরে দেখেন নানা কার্যক্রম। গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেলেও ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতেই বিশেষ দূতের এই সফর।
হুট করে বেড়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের আনাগোনা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ও মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত।
মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার পৌছান উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে। ৪ নম্বর ক্যাম্পে নেমেই পরিদর্শন করে ই-ভাউচার সেন্টারের কার্যক্রম। পরে ক্যাম্পে পরিচালিত জাতিসংঘের নানা সংস্থার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি একান্তে বৈঠক করেন রোহিঙ্গা নারী, শিশু, তরুণ ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে। এসময় ক্যাম্পগুলোর ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।
জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপে অংশগ্রহণকারী রোহিঙ্গারা বলছেন, নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতিসহ নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা না পেলে মিয়ানমারে ফিরবেন না তারা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গা নারী বলেন, নোয়েলিন হেইজার আমাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন আমরা মিয়ানমার ফিরে যাবো কিনা? তার উত্তরে বলেছি, আমরা স্বদেশে ফিরে যেতে চায়। এখানে ক্যাম্পের জীবন আর ভালো লাগে না। এখন নিরাপদে নিজদেশ মিয়ানমারে নিজ ভিটে-মাটিতে ফিরতে চায়। এই বিষয়গুলো অবহিত করেছি। তিনি আমাদের আশ^াস্ত করেছেন, নিরাপদে স্বদেশে ফিরতে পারবো। সে লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ নাকি কাজ করছে। তবে কবে স্বদেশে ফিরতে পারবো তার কোন সঠিক সময় বলতে পারেনি।
বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেলেও তার সফর নিয়ে কথা বলেন ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে নোয়েলিনের এ সফরে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র রেজিনা দ্যে লা পর্তিল্লা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে নিবিড় ভাবে কাজ করছে জাতিসংঘ। সব আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে সংকট সমাধানের উপায় খোঁজা হচ্ছে। জাতিসংঘ মনে করে প্রত্যাবাসন অবশ্যই টেকসই হতে হবে।
রেজিনা দ্যে লা পর্তিল্লা আরও বলেন, নোয়েলিন হেইজার চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখার জন্য। তিনি নিজের বুঝার জন্য তাঁদের সাথে কথা বলেছেন, তারা এখন কেমন আছে এবং ভবিষ্যতের বিষয়ে তারা কি আশা করছে। বিশেষ করে, ঘরে ফিরে যাবার ব্যাপারে। বেশিরভাগি ঘরে ফিরতে চায় কিন্তু কেবল যখন তা নিরাপদ এবং তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে তখন। মূলত নথিপত্র ডকুমেন্টেশনের জন্য, তাঁদের ঘরে ফেরার অফিশিয়াল কার্যাদি সম্পন্নের জন্য, শিক্ষা এবং চলাফেরার স্বাধীনতা এবং একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তাঁদের অবস্থান নিশ্চিতকরণের একটি পদক্ষেপ হিসেবেই তার এই সফর।
আর অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দ্যেশ্যে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের এ সফর। প্রথমদিন রোহিঙ্গা সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং ক্যাম্পের নানা কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখেছেন। পরে তা তিনি রিপোর্ট আকারে জমা দিবেন।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিচেল ব্যাচলে। তার এক সপ্তাহ পরই ক্যাম্প পরিদর্শনে আসলেন মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।