২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক   ●  সড়ক দখল করে নৈরাজ্য সৃষ্টি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে কক্সবাজারে আ.লীগের ৯১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রোহিঙ্গা পুনর্বাসন জালিয়ারচরে


বহুল আলোচিত হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হবে না। তাদের পুনর্বাসন করা হবে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ জালিয়ারচরে। বন আচ্ছাদিত প্রায় তিন দশকের পুরনো এ দ্বীপটি মানুষ বাসযোগ্য। দ্বীপটির সঙ্গে নৌ যোগাযোগ সহজ করতে এরই মধ্যে পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। হেলিকপ্টার অবতরণে হেলিপ্যাড নির্মাণকাজ চলছে। নিরাপত্তায় রয়েছেন নৌবাহিনীর সদস্যরা।

২০১৪ সালে পর্যটননগরী কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ওই বছরের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে নোয়াখালীর হাতিয়া অথবা সুবর্ণচরে জমি খোঁজার নির্দেশ দেন। সরকারের সিদ্ধান্তে ৩৪ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসনের জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসন হাতিয়ার জালিয়ারচরে ৫০০ একর জমি চিহ্নিত করে।

কিন্তু জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে। মানুষ বসবাস অযোগ্য এ দ্বীপে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। স্থানীয় সাংবাদিক সুমন ভৌমিক জানান, কর্মকর্তাদের ভুল এবং নাম বিভ্রাটের কারণেই এই বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে। জালিয়ারচরকে জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে ঠেঙ্গারচর বলা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে নেওয়া হবে_ সরকারের এ ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

রয়টার্স ঠেঙ্গারচর পরিদর্শনে যায়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠেঙ্গারচর মানুষ বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ঠেঙ্গারচরের নাম বদলে এরই মধ্যে প্রস্তাব করেছে হাতিয়া উপজেলা প্রশাসন। ঠেঙ্গারচর ও জালিয়ারচর_ এ দুই দ্বীপকে মিলিয়ে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌসের নামানুসারে ‘চর মুনির’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিদেশে থাকায় এ বিষয়ে

তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় এমপি আয়েশা ফেরদৌস দাবি করেন, জালিয়ারচর নামে কোনো দ্বীপই নেই। দুই অংশে বিভক্ত দ্বীপটির নাম ‘চর পিয়া’। একসময়ে যার নাম ছিল ঠেঙ্গারচর। আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী এ নামকরণ করেছেন বলে জানা গেছে। হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মুর্শেদও দাবি করেন, ‘চর পিয়া’য় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে।

জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে নির্বাচিত স্থান পরিদর্শনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন জালিয়ারচরে যান।

এ বিষয়ে নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি রাজস্ব) সুব্রত কুমার দে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কোন দ্বীপে গিয়েছিলেন, তা আমার জানা নেই।’ তবে তিনি নিশ্চিত করেন, ঠেঙ্গারচরে নয়, জালিয়ারচরে জেটি, হেলিপ্যাড নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র নৌ সেনা মোতায়ন রয়েছে।

তবে হাতিয়া উপজেলার প্রশাসন এর আগে বেশ কয়েকবার দাবি করেছে, জালিয়ারচর বলে কোনো জায়গা নেই। পুরো দ্বীপের নাম ঠেঙ্গারচর। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেন, ঠেঙ্গারচরের উত্তর-পশ্চিমে জালিয়ারচর নামে দ্বীপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে অনেক নাম রয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে এখনও দ্বীপগুলোর কোনো নাম নেই। তাই মানুষ যা বলে, সেটাই সঠিক নাম। ঠেঙ্গারচরের উত্তর-পশ্চিমে জালিয়ারচর নামে একটি চর আছে। এটি ঠেঙ্গারচরের চেয়েও পুরনো চর। বর্ষায় ডোবে না। চরটিতে বন রয়েছে। সাগর থেকে বেশ উঁচু। কেউ কেউ এই চরটিকে ঠেঙ্গারচরও বলে।’

গত মাসে বন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠেঙ্গারচর মানুষ বাসযোগ্য নয়। কিন্তু একই মাসে এডিসি সুব্রত কুমার দে এবং সদ্য বদলি হওয়া নোয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত পরিদর্শন কমিটি প্রতিবেদন দেয়, ঠেঙ্গারচর বাসযোগ্য। এক মাসের ব্যবধানে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে সুব্রত কুমার দে বলেন, ‘ঠেঙ্গারচর বাসযোগ্য নয়। তবে সেখানে বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সড়ক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে মানুষ বাস করতে পারবে।’

জালিয়ারচর গুগল ম্যাপে দৃশ্যমান হলেও ঠেঙ্গারচর এখনও স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায় না। এ তথ্য জানিয়ে এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি শফিক শাহীন সম্প্রতি ঠেঙ্গারচর ও জালিয়ারচর ঘুরে এসেছেন। তিনি  জানান, ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের কথা বলা হলেও সেখানে কোনো স্থাপনা নেই। বন বলতে ছোট ছোট কিছু গাছ রয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ চলছে জালিয়ারচরে। স্থানীয়রা সবাই জানেন, জালিয়ারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু কেন জানি, জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ জালিয়ারচরকেই ঠেঙ্গারচর হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে।

ঠেঙ্গারচর মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা নতুন দ্বীপগুলোর একটি। ২০০০ সালের পর জাগতে শুরু করে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এর অবস্থান। হাতিয়ার নলচিরা ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঠেঙ্গারচর যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। ২০১১ সালে বনায়ন শুরু হয় এ দ্বীপে। ১০ হাজার একর আয়তনের দ্বীপটির বেশিরভাগ বর্ষায় ডুবে যায়। যে অংশটুকু উঁচু, সেখানেও মানুষ বসবাসের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। দ্বীপটির চারদিকে একহাঁটু কাদা। কাদা না মাড়িয়ে ওঠার উপায় নেই। নদীর কূল থেকে কয়েক ফুট ওপরে উঠতেই চারদিকে শুধু উরি ঘাস। ছোট ছোট গাছ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

ঠেঙ্গারচর থেকে আরও উত্তর-পূর্বে জালিয়ারচরের অবস্থান। ১৯৯০ সালের শুরুতে দ্বীপটি জেলেদের নজরে আসে। গাঙ্গুরিয়া মাছের আধিক্যের কারণে একসময় এর নাম ছিল ‘গাঙ্গুরিয়ারচর’। পরবর্তী সময়ে মানুষের মুখে মুখে বদলে নাম হয় ‘জাইল্যারচর’। পরে বন বিভাগের কাগজপত্রে নামকরণ হয় ‘জালিয়ারচর’। ১৯৯৮ সালে বনায়ন শুরু হয়। উঁচু অংশ বর্ষায় ডোবে না। মানুষের বসতি না থাকলেও দ্বীপটির জমি কৃষিকাজের উপযোগী হয়ে উঠেছে। গরু-মহিষ চড়ানো হয়। একসময় জলদস্যুদের আস্তানা ছিল দ্বীপটিতে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরুর পর পালিয়ে গেছে জলদুস্যরা।

জালিয়ারচর দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। প্রস্থে সোয়া চার কিলোমিটার। বন বিভাগের বা হাতিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কাছে এর আয়তন সম্পর্কে তথ্য নেই। তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, দ্বীপটির আয়তন ২৫ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি। ভূমির পরিমাণ সাড়ে ছয় হাজার একরের মতো। স্থানীয়রা জানান, দুই চরেরই পাশে নতুন নতুন ভূমি জাগছে। দ্বীপ দুটি ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।