মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে মনে করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মতে, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিরপেক্ষ তথ্য না দিয়ে তাদের প্রত্যাবাসনে বাধ্য করা হলে তা অগ্রহণযোগ্য হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আগে তাই রাখাইনের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে মিয়ানমারে প্রবেশাধিকার দাবি করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বহুদিন থেকেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সম্প্রদায় এই দাবি জানিয়ে আসছে। সীমান্তরেখায় আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ব্যক্ত করেছে ইউএনএইচসিআর। মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছে তারা।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের নিয়ন্ত্রণরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিশানা করে চলতি সপ্তাহে মিয়ানমার সেনাসমাবেশ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলেছে। সেনা মোতায়েনের ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৬ হাজার মানুষ দু’দেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যানস ল্যান্ড তমব্রুতে অবস্থান করছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তরেখায় আটকে পড়া এই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে নো ম্যান্স ল্যান্ডে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ ওই স্থান ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। এতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
৫ মার্চে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, তারা মনে করে সময় ও পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অনুকূলে নয়। সহিংসতার স্বীকার হওয়া মানুষগুলোর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর তাগাদ দিয়ে ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারকে বলেছে’ ‘সব মানুষেরই আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে।’ সংস্থাটি মনে করে, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি হতে হবে ঐচ্ছিক, যাতে তারা ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউএনএইচসিআর আবারও জানাতে চায়, ফিরে যাওয়ার জন্য পরিস্থিতি এখনও রোহিঙ্গাদের অনুকূলে নয়। যেস কারণে তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে, সেসবের বিষয়ে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা এই বক্তব্যই পুনর্ব্যাক্ত করছি যে রোহিঙ্গাদের অধিকার হরণের প্রশ্নে এখনও অনেক আগ্রগতি করার সুযোগ রয়েছে। যেসব কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির বিষয়টি এখনও একটি জটিল বিষয় হয়েই রয়েছে।’
ইউএনএইচসিআর মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআর ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে যেন রাখাইনে মানবিক বিষয়ে কাজ করার অনুমাতি দেওয়া হয়। তারা মনে করে, সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন, রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশনের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওয়াদা বাস্তবায়ন, সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নিরপেক্ষ তথ্য জানানোর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করার জন্য সেটি জরুরি।
মানবাধিকার সংস্থাটি বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশে সরকার ও জনসাধারণ উদারভাবে শরণার্থীদের গ্রহণ করছে এবং তাদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৭ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।