কক্সবাজারসময় ডেস্কঃ বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের হয়ে বাংলাদেশে বড় দায়িত্ব পালন করছেন বছরতিনেক হলো।এরইমধ্যে ‘মিশুক’ ও ‘সদাহাস্যোজ্জ্বল’ তকমা লেগে গেছে আপাদমস্তক। প্রচণ্ড গরম ও রোদ উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গিয়েও সেই একই হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এই হাইকমিশনার সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তাদের আনন্দে ভাসিয়েছেন।
সোমবার দুপুর ১২টায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে তিনি পৌঁছান বালুখালি ক্যাম্পে। সেখানে ভারত সরকারের সহায়তার তৃতীয় চালান হিসেবে ১০ লাখ টনের বেশি কেরোসিন ও ২০ হাজার পরিবারের জন্য স্টোভ হস্তান্তর করেন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী মায়ার কাছে। আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পরপরই প্রচণ্ড রোদের মধ্যে হেঁটে ঢুকে পড়েন রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন দেখতে।
বালুখালি ক্যাম্পে শিশুদের ভারত-বাংলাদেশের স্মারক দিচ্ছেন শ্রিংলা
একটু এগিয়ে গলিপথে ঢুকে দেখেন মাচার উপর বসা কয়েকজন বয়স্ক মানুষ। পাশেই জড়ো হয়েছে গোটা ত্রিশেক শিশু। শ্রিংলা এবার বাংলায় সালাম দিয়ে জানতে চাইলেন তাদের ভালোমন্দ। কথাও বলেন পুরোটা বাংলায়। জানতে চান ভারতের সহযোগিতা পেয়ে তাদের কেমন লাগছে। তাদের খুশি দেখে পরে নিজহাতে সবাইকে দেন দুই দেশের পতাকাচিহ্নিত ব্যাজ।
এসময় পাশে দাঁড়িয়ে শিশুদেরও বঞ্চিত করেননি। তাদেরও ডেকে লাইন ধরে দেন এ শুভেচ্ছাস্মারক। শিশুদের পতাকা দেখিয়ে জানতে চান তারা চেনে কিনা। তাতে কেউ সাড়া দেয়, কেউ দেয় না। তবে সবার চোখে-মুখে ছিল বর্ষামৌসুমে অতি প্রয়োজনীয় কেরোসিন তেল ও স্টোভ প্রাপ্তির আনন্দ। কয়েকটি দোকানে ঢুঁ মেরেও তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
কুতুপালংয়ের একটি চিকিৎসা ক্যাম্প
পরে ছোটেন কুতুপালং ক্যাম্পে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া হাজার দুয়েক হিন্দু পরিবারের বসতিপাড়ায় ঢোকেন। অনেকটা সময় কাটান সেখানেও। শ্রিংলাকে পেয়ে সাদরে বরণ করে নেন আশ্রিতরা। সেখানেও নিজহাতে কেরোসিন ও স্টোভ বিতরণ করেন।
এবার ডাক পড়লো শিশুদের। এবার বের হলো বই। বিভিন্ন নীতিকথা ও জানা-অজানার শিশুতোষ বই নিতে আগ্রহের কমতি ছিল না প্রতিটির শিশুর। বই পাওয়ার পরপরই কয়েকজনকে পড়ার চেষ্টা করা ও ছবিতে মশগুল থাকতে দেখা যায়। অন্য সবার মুখে সাময়িক হলেও ছিল হাসি।
একটি পরিবারের ঘরে ঢুকে কথা বলছেন শ্রিংলা
পরে এই ইউনিটের ডাক্তারি ক্যাম্প, সেখানের ব্যবহার হওয়া ওষুধ, ডাক্তার, চিকিৎসাব্যবস্থার খোঁজ-খবর নেন। ঘামে ভিজে একাকার হলেও তার মধ্যে ছিল না কোনো ক্লান্তির ছায়া।
সবশেষ মন্দিরে প্রণাম করার আগে ঢুকে পড়েন একটি পরিবারের অন্দরমহলে। দেখেন তাদের ঘরের ভিতরের চালচিত্র। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বেশ কিছুক্ষণ। ঘরে রাতে সোলারের আলো জ্বলে দেখে খুশি হলেন। তাদের কাছে কয়েকবার জানতে চান তারা রাখাইনে ফিরতে চান কিনা। তবে উত্তরে বারবার ফিরে আসে বিভীষিকাময় অত্যাচারের কথা। তারা এখনও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না নিজদেশে ফিরলে তাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
বই ও কেরোসিন পাওয়ার পর হাস্যোজ্জ্বল একটি পরিবার
বছর ঘুরলেও বেতনার ক্ষত শুকায়নি তাদের। এখানে এখন ভালো আছে বলেই জানায় তারা। ফেরার আগ্রহ কতটুকু তা ঠিক বোঝা গেলো না। তবে তিন দফায় ভারত সরকারের সহযোগিতায় বেজায় খুশি তারা।
ত্রাণ হস্তান্তর শেষে শ্রিংলা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে বর্ষমৌসুমের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি তারা দিয়েছেন। আসছে শীত মৌসুমের কথা বিবেচনা করে কম্বল ও কিছু চিকিৎসা উপকরণের দাবিও পূরণ হওয়ারই ইজ্ঞিত ছিল শ্রিংলার মুখে।
সে যাই হোক আপাতত রোহিঙ্গা শিবিরে কিছুটা হলেও হাসি ফোটাতে পেরেছেন শ্রিংলা, তার দেশ।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।