মায়ানমারের আরকান রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও অর্থ বিতরণকালে উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের আনরেজিঃ বস্তি এলাকা থেকে একজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই। আটকের সত্যতা স্বীকার করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার এনএসআইয়ের উখিয়া উপজেলা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। আটকের পর তাকে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানায়।
গতকাল ১৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তি কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান এলাকার সুলতান আহম্মদের পুত্র মৌলভী শামশুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই এলাকার একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শামশুল আলম গোপনে কুতুপালং আনরেজিঃ শরনার্থী শিবিরের নতুন বস্তি এলাকায় সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নগদ টাকা বিতরণ করছিল। এসময় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে। ১০/১২ ধরে কুতুপালং ক্যাম্পের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে রাতের আধাঁরে লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণ ও সহযোগিতার নামে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা অর্থ বিতরণে করে আসছিল। যার ফলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আরও বেড়ে যায়। এক কথায় রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে তাদের ধারণা। এদিকে শামশুল আলমকে গ্রেপ্তার করলেও রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের অর্থ বিতরণ সারাদিন অব্যাহত ছিল এবং সন্ধ্যার পরে বস্তি এলাকায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে চাল, ডাল, সহ নানান দ্রব্য সামগ্রী বিতরণ করেন হেফাজত ইসলাম নামের ইসলামী সংগঠনের কথিত কয়েক কর্মী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে আগামী ১৮ই মার্চ হেফাজত ইসলামের মায়ানমার অভিমুখে লং মার্চকে কেন্দ্র করে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা শরনার্থী ক্যাম্পের আশেপাশের বিভিন্ন বাসা ভাড়া নিয়ে হেফাজত ইসলাম নামের ইসলামী সংগঠনের নামধারী কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি অবস্থান নিয়ে গোপনে রাতের আধাঁরে সন্ধ্যায় ত্রাণ সামগ্রী বিরতণ করেন। রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে জঙ্গিরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে সচেতন মহল ধারণা করছেন।
গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে রোহিঙ্গা বস্তির পাশ্ববর্তী আয়েশা বেগমের বিরুদ্ধে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জংগী সংগঠনের নেতারা এসে উক্ত আয়েশা বেগমের বাড়ীতে অবস্থান নিয়ে পরে সুযোগ বুঝে রাতে রোঙ্গিাদের মাঝে অর্থ বিতরন করে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। স্থানীয় জনগণ, আয়েশা বেগমকে আশ্রয়দাতা হিসেবে শীর্ষে রেখেছেন। বস্তিতে যাদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশী চোখে পড়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ নুর, মৌলভী জানে আলম, মৌলভী হামিদ, ডাক্তার জয়নাল অন্যতম। তাদের বিরুদ্ধেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ অনেক পুরোনো। তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার তৎপরতায় নিয়োজিত রয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। আটক শামশুল আলমের সাথে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত ২ দিনে ২ হাজারেও অধিক রোহিঙ্গা মায়ানমার সীমানা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ গঠছে। তারা কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প ও আশেপাশের পাহাড়ের বস্তিগুলোতে অবস্থান করছে। কুতুপালং শরনার্থী শিবির থেকে উখিয়ার মরিচ্যা রামু সড়ক দিয়ে দুইটি চাঁন্দের গাড়িতে করে যাওয়ার পথে রামু রজার কুল এলাকা থেকে বিজিবি’র সুবেদার গোলাম মোরতাজার নেতৃত্বে এক দল যোয়ান ৩৩ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুনরায় কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তাদের মায়ানমারে পুশব্যাক না করে বিজিবি শরনার্থী ক্যাম্পের কথিত চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আটক ৩৩ জন রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক না করে ক্যাম্প এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কালে আটক ব্যাক্তি সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খাইয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ বিতরণের সময় আটক ব্যাক্তি থানায় সোর্পাদ করেছে। তাকে জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কি না তা জিজ্ঞেসাবাদ করা হবে বলে জানান।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।