আবদুল আজিজ,(বাংলাট্রিবিউন): কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ২৫ আগস্টের পর এসব বাজারে ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, সয়াবিন তেল, চিনি, মুড়ি, কাঁচা মরিচ, শসাসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। স্থানীয়দের দাবি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসতে শুরু করার পর থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দেয় এবং এর প্রভাব পড়ে দামে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ২৫ আগস্টের পর নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে, যা ওই সময়ের তুলনায় এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর বাজারের মুদি দোকানদার ছালামত উল্লাহ সওদাগর বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করার পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। কেবল শামলাপুর এলাকায় প্রায় অর্ধ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন। বিশেষ করে, বাজার এলাকায় রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেওয়ায় সবকিছুর দাম দিগুণ হয়ে গেছে।’
একই এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ছৈয়দ আহমদ বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে আবার সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। তাই বাজারে মাছ নেই। খাল, বিল ও পুকুরসহ মিঠাপানির বিভিন্ন প্রজাতির কিছু মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দাম আকাশছোঁয়া।’
শামলাপুর বাজারে দেখা হয় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম কোম্পানির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। যেদিকে যাই সেদিকেই রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। সরকার নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করলেও রোহিঙ্গাদের কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। জনজীবন খুবই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
উখিয়ার কোটবাজার এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী ছৈয়দ হোসেন সওদাগর বলেন, ‘গুদামে মাল নেই। মজুত মালামাল বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এসে রোহিঙ্গাদের জন্য কিনে নিয়ে গেছে। এমনকি, কক্সবাজার শহরেও এখন নিত্যপণ্যের সংকট।’
উখিয়ার কুতুপালং বাজারের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই ত্রাণ হিসাবে চাল পাচ্ছে। তাই চালের বাজার এখনও স্থিতিশীল। এছাড়া বাকি সব কিছুর দামই দিগুণ হয়ে গেছে। এক কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, এক কেজি টমেটো ১৬০ টাকা, এক কেজি বেগুন ৮০ টাকা, এক কেজি চিচিঙ্গা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ তো পাওয়াই যাচ্ছে না। তাই স্থানীয়রা পড়েছেন বেকায়দায়।’
উখিয়ার ছেপটখালী গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ফিশিং ট্রলারের বহদ্দার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাগরে এখন মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। উপকূলে ছোটখাটো জাল ফেলে ধরা মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তবে এতে রোহিঙ্গারা ভাগ বসানোয় দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে মাছ বাজারে আগুন।’
উখিয়ার সদর হাট বাজার, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, টেকনাফের সদর হাটবাজার, শামলাপুর, হ্নীলা, সাবরাং বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি আলু কেজি প্রতি ৪০/৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০-২২০ টাকা, পটল ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০-৫০ টাকা, কাকরোল ৪৫ টাকা, বরবটি কেজি ৬০-৫০ টাকা, বয়লার মুরগী কেজি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা, প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া গুড় কেজি প্রতি ৭০ টাকা, ছোলা কেজি প্রতি ৮০ টাকা, গরুর মাংস কেজি প্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা এক কেজি ৪০, ময়দা এক কেজি ৪৫, চাউল এক কেজি ৪০/৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গারা আসার আগে বাজারে নিত্যপণ্যের কোনও সংকট ছিল না। তাই দামও ছিল এখনকার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু এখন নিত্যপণ্যের বাজার তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন হাট মনিটর করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান চালায়। যেসব ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করবে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে।’
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।