জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ৭১ বাংলাদেশীদের উপর পাকিস্তানীদের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরণের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে হবে।
২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ ও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গাচর স্থানাস্তরের আগে সেই জায়গাটি মানুষের বসবাসের উপযোগী করতে হবে। নয়তো রোহিঙ্গারা আরেক মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে পারে। এসময় তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সে-দেশের সেনাবাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবকেরা মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছে। এই নির্যাতন গণ হত্যার সামিল। হত্যা, শিশু হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ করে ঘরবাড়ি জালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরূপায় হয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে সরকার মানবিকতা বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। বনভূমির হাজার হাজার একর জায়গা দখল করে রোহিঙ্গাদের বস্তি নির্মাণের কারনে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে রয়েছে। তিনি রেহিঙ্গা পূর্ণবাসন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়গুলো কিছু দিনের মধ্যে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাউন্সিল ও সম্মেলেনে গুরুত্ব সহকারে তা তুলে ধরার কথাও বলেছেন। যাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরে নিয়ে নাগরিকত্বের অধিকার ফিরিয়ে দেয়। অথবা কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়া সহ উন্নত রাষ্ট্রের পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করা হয়।
এছাড়াও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সাথে সফরে আসা মানবধিকার কর্মী ও জাতীয় মানবধিকার কামিশনের সদস্য মেঘণা বলেন, আমাদেরকে বলতে হবে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যার সামিল। এই নরকীয় হত্যা কান্ডের প্রতিবাদ জানাতে হবে। তাই আমরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, নারী ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পরিদর্শণ কালে মানবাধিকার কমিশনের সাথে কথা বলেন, মিয়ানমারের খিয়ারী প্রাং এলাকার গুলিবিদ্ধ মমতাজ বেগম (২৫), ৫ বছর বয়সী শিশু ইব্রাহীম, আব্দু শুক্কুর (৮) ও ১২ বছর বয়সী তমিদা খাতুনের সাথে। তিনি তাদের মুখ থেকে নির্যাতনের করুণ কাহিনী শুনেন। এই ছাড়াও তিনি কথা বলেছেন, মিয়ানমারের নাফুরা ও খিয়ারী প্রাং থেকে ২মাস পূর্বে পালিয়ে আসা হাসিনা আক্তার (৪০), পায়ে গুলিবিদ্ধ, ছেতেরা বেগম (১৮), সালমা খাতুন (৪০), রমিদা খাতুন (২৮), মৌঃ আবুল হাসিম (৪৫), জামাল হোসেন (১৬) এর সাথে। এ সময় সেখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে তাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন কমিশনের চেয়ারম্যান। ক্যাম্প পরিদর্শণ শেষে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ সামশু জোহার সাথে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন কাজী রিয়াজুল হক।
তিনি বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ও আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ শেষে কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিক ও আইওএম পরিচালিত শরণার্থী ক্যাম্পের হাসপাতালও পরিদর্শন করেন। এর পর পরিদর্শণে যান উখিয়ার বালুখালীতে গড়ে উঠা নতুন রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায়। এসময় তার সাথে ছিলেন, উখিয়া উপজেলা ভূমি কমিশনার শিবলী নোমান, ডাক্তার মহিউদ্দিন খান, ইউএনডিপি, আইওএম, ইউএনসিআর সহ সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাগণ। দুপুর ২ টার দিকে তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনের কথা রয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।