ঈদের ছুটিকে আনন্দময় করতে প্রায় আড়াই লাখ পর্যটকের পদভারে মুখরিত এখন কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন এলাকা। সাগর পাড়ের লাবনী পয়েন্ট, সী ইন পয়েন্ট, শৈবাল, কলাতলী, দরিয়া নগর, হিমছড়ি, মেরিন ড্রাইভ, ইনানী, বার্মিজ মার্কেট সহ কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকের উচ্ছাসে উচ্ছাসিত। হাল্কা বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশকে উপেক্ষা করে যেন আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে পর্যটকেরা। কেউ খোলা চাঁন্দের গাড়িতে করে ঘুরে আসছে সদ্য ণির্মিত মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কেউবা পাহাড়ি ঝর্ণাকে ছুঁতে হিমছড়ি, কেউ পাহাড় থেকে সাগর উপভোগ করতে দরিয়া নগর, কেউবা সমুদ্র স্নানে আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে। গতকাল পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
ঈদের ৩ থেকে ৪ দিন আগেও বৈরি পরিবেশের কারনে হোটেল মোটেলগুলোর অধিকাংশ কক্ষই খালি ছিল। খোজ নিয়ে জানা গেছে কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে তিনশো হোটেল মোটেল আর গেস্ট হাউসের অধিকাংশই কক্ষই অগ্রিম বুকিং ছিলো ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ। এ নিয়ে হতাশার শেষ ছিলোনা পর্যটন ব্যবসায়িদের। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকের ভিড় বাড়তে থাকে। ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত অধিকাংশ হোটেলেরই ১০০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন “ ঈদের ৩ দিন আগেও বুকিং ছিলো সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ। এখন প্রতিটি হোটেলেই ৮০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ কক্ষই বুকিং। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এত দিনের লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আমরা মনে করছি। ”
তারকা মানের হোটেল সায়মান বীচ রির্সোসের সিনিয়র রিজারভেশন অফিসার মোঃ হোসাইন বলেন “ ২৭ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অনেকেই এখনো ফোন করে বুকিং দিতে চাচ্ছে । কিন্তু আমরা দিতে পারছিনা। ”
হোটেল সী ওর্য়াল্ডের জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ দাশ বলেন “ আমাদের হোটেলে ঈদের ২য় দিন থেকে অধিকাংশ কক্ষই বুকিং হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং আছে। আগামীকাল (আজ) থেকে পর্যটকেরা ফিরে যাবে।”
ঝিনুক বহুমুখি মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি কাশেম আলী বলেন “ বর্ষা মৌসুম হওয়ায় পর্যটক আসবেনা বলে আমরা হতাশাই ছিলাম। রাঙ্গামাটির পাহাড় ধ্বঃস, ঘূর্ণিঝড় মোরা পর্যটকের মনে দাগ কেটেছে বলে তারা কক্সবাজার আসবেনা বলে মনে করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে ঈদের দিন থেকে প্রচুর পর্যটক আসছে। আমাদের প্রায় ৪’শ ঝিনুকের প্রতিটি দোকানেই খুব ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। পর্যটকেরা আমাদের পন্য পছন্দ করছে।”
পর্যটন ব্যবসায়ি হিরাম কক্সের সত্ত্বাধিকারি আরাফাত সাইফুল বলেন “অন্যান্য ঈদ কিংবা ছুটির দিনের অনেক আগে থেকেই পর্যটকেরা আমাদের ফোন করে রুম বুকিং করে রাখে। কিন্তু এবার এটা কম হয়েছে। তারা যেদিন আসবে তার একদিন আগেই বুকিং দিয়েছে। এখনো অনেকে ফোন করে হোটেল কক্ষ বুকিং দিতে চাচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ কক্ষ বুকিং থাকাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ি কক্ষ আমরা বুকিং দিতে পারছিনা।”
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক দম্পতি আসফাক পারভেজ ও লামিয়া পারভেজ বলেন “বিয়ের পর এটাই আমাদের প্রথম ঈদ। স্বামী -স্ত্রী দু’ জনেই চাকরি করি। ব্যস্ততার কারনে দূরে কোথাও যাওয়া হয়টি। একসাথে অনেকদিনের ছুটি পেয়ে কক্সবাজার আসার লোভ সামলাতে পারলামনা। খুব উপভোগ করছি কক্সবাজার সৈকতে।”
রাজশাহী থেকে আসা শাহিন,রবি, বাপ্পি, সোনিয়া , শান্তা বলেন “ কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই কাজিনরা মিলে চলে এলাম। সত্যি কক্সবাজার দেখার মত একটা জায়না। এত সুন্দর বিশাল সাগর, মনোরম রেস্টুরেন্ট, মেরিন ড্রাইভ, বৌদ্ধ মন্দির, দরিয়া নগরের গুহা সত্যি অবাক করার মত সৌর্ন্দয। ”
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।