দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ রয়েছে কক্সবাজারের ৬টি মাছ ধরা ট্রলার। ৭২ জন জেলে উদ্ধার হলেও নিখোঁজ রয়েছে এখনো অন্তত শতাধিক জেলে। এসব জেলে পরিবারে এখন চলছে আহাজারি। স্বজন, জনপ্রতিনিধি ও ট্রলার মালিকরা জেলেদের উদ্ধারের জন্য সহায়তা চেয়েছেন সরকারের।
কারো স্বামী, কারো ছেলে আবার কারো ভাই। গভীর সাগরে নিখোঁজ স্বজনদের জন্য কান্নার রোল থামছেনা কক্সবাজার উপকূলের জেলে পল্লীতে। সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর গত ২ নভেম্বর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন জেলেরা। এখন পর্যন্ত তাদের সন্ধান না পেয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার।
কক্সবাজার শহরতলির মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার জেলে মিনহাজ উদ্দিন। সাগরে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ৯দিন ধরে নিখোঁজ মিনহাজ। স্ত্রী নুর আয়েশা, তিন ছেলে, এক মেয়ে ও বৃদ্ধা শাশুড়ি নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় কান্না করতে করতে জ্ঞান হারাচ্ছে আবার পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরাচ্ছেন প্রতিবেশিরা। যেন প্রতিবেশিরাও শান্তনা দিয়ে কান্না বন্ধ করতে পারছেন না নুর আয়েশা ও তার ছেলে মেয়েদের।
নুর আয়েশা বলেন, স্বামী সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৯ দিন ধরে কোন প্রকার খোঁজ-খবর নাই। এখন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমি কি করবো। কিছুই বুঝি না, আমার স্বামীকে সরকার যেভাবে হোক সাগর থেকে ফিরিয়ে আনুক।
শুধু নুর আয়েশা নয়, একই এলাকায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে ৮০ জনের বেশি। এসব পরিবারগুলোতেও চলছে আহাজারি। এ অব¯হায় নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন স্বজনরা।
মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ার নিখোঁজ মো. আনোয়ারের স্ত্রী মর্জিনা, মকছুদ আহমদের স্ত্রী আয়েশা, লোকমান মাঝির ছেনুয়ারা, মোহাম্মদ ইলিয়াছের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম ছবি নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বসে কান্না করছেন। আর বলছেন, আল্লাহ যেভাবে হোক আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত দাও।
তাদের মধ্যে মর্জিনা ও ছেনুয়ারা বলেন, ৯ দিন ধরে আমাদের স্বামী নিখোঁজ। এছাড়াও ট্রলার মালিক, মেম্বার কিংবা প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজ নিতে
আসেনি। এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় স্বামীদের ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। জীবিত হোক কিংবা মৃত হোক সরকার যাতে আমাদের স্বামীদের ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।
এদিকে মধ্যম কুতুবদিয়ার পাড়ার রাস্তা পাশে বসে কান্না করছে নিখোঁজ রশিদ আহমেদর কন্যা দিলবাহার। শুধু তার পিতা নয়, দু’ভাই নুর আলম ও আবদুল আমিন ৯ দিন ধরে নিখোঁজ।
দিলবাহার কান্না করে বলেন, আমরা এখন খুবই অসহায়। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাবা ও দুই ভাই নিখোঁজ রয়েছে। তাই আমার বাবা ও ভাইদের ফিরে পাওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।
কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, ইতিমধ্যে ২টি ট্রলারে করে ৬০ জেলে ফিরে আসলেও কুতুবদিয়া পাড়ার ৩টি ট্রলারের ৮০ জন জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। ফিরে আসা ট্রলারের জেলেদের মাধ্যমে জানা যায় গভীর সাগরে বিকল হয়ে কয়েকটি ট্রলার ভাসছে। সেখানে কোন প্রকার উদ্ধারকারী জাহাজ এখনো পৌঁছাতে না পারায় ট্রলারের জেলেগুলো ফিরতে পারছে না।
তবে কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক জানান, কক্সবাজারের ৬টি ট্রলারের ১০৭ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাদের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সাগরে টহলরত নৌবাহিনীর জাহাজগুলো গভীর সাগরে যায়না অথবা আইনগত কারণে যেতে পারে না। যদি গভীর সাগরে হেলিকপ্টার দিয়ে খোঁজা হত তাহলে অনেক জেলেকে জীবিত কিংবা মৃত ফিরে পাওয়া যেত।
কক্সবাজারস্থ কোস্টগার্ড কন্টিজেন্ট কমান্ডার মোশারফ হোসেন জানান, বেশ কয়েকদিন হয়েছে জেলেরা নিখোঁজ রয়েছে, যদি কেউ মারা যেত তাহলে তাদের মৃতদেহ সাগরে ভাসতো। কিন্তু এখনো কোন পর্যন্ত সাগরে ভাসমান অবস্থায় কোন মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে সাগরে কোস্টগার্ড গত কয়েকদিন ধরে কাজ করছে। বৃহস্পতিবারও বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, লাবণী পয়েন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কোস্টগার্ড টহল দিয়েছে। যা অব্যাহত থাকবে।
ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, দুর্যোগের কবলে পড়ে ৯টি ট্রলারসহ দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ ছিল। গত মঙ্গলবার নৌবাহিনী উদ্ধার করে ১২ জনকে। আর নানাভাবে উদ্ধার হয় ৩টি ট্রলারসহ ৬০ জন জেলে।
সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।