কক্সবাজার শহরের পশ্চিম লারপাড়ায় নুরুল ইসলাম নুরু বাহিনীর রাম রাজত্ব চলছে। তার বাহিনী প্রতিদিন ঘটাচ্ছে ডাকাতি-ছিনতাই-অপহরণ ও দখল-বেখলের কোন না কোন ঘটনা। চালাচ্ছে নিরব চাঁদাবাজি। তাদের দাবি পূরণ না করায় মঙ্গলবার সকালে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান ও বোনকে প্রহার করে স্বর্ণালংকার লুট ও বাসার ব্যবহার্য্য পণ্য ভাংচোর করেছে তারা। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছে ভূক্তভোগী পরিবার।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, পশ্চিম লারপাড়া, উত্তরণ এলাকা, জেল গেইট, ইসলামাবাদসহ আশপাশের পাহাড়ি এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে পশ্চিম লারপাড়ার নুর হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম নুরু (৩২)। তিনি সম্প্রতি নিহত হওয়া ডাকাত নুরুল আলমের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। গুরু মারা যাবার পর অপরাধের আধিপত্য এখন নুরুই নিয়ন্ত্রণ করছে। তার রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মজুদ ও বেচা কেনা। এরই সুবাদে নুরুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২০-২৫ জনের একটি স্বশস্ত্র গ্রুপ। সেই গ্রুপকে কয়েকভাগে বিভক্ত করে একেকটি এলাকার অপরাধ কর্ম নিয়ন্ত্রণ করছে বাহিনীটি। তাদের ব্যবহার করে টমটম, রিক্সা, সিএনজি যাত্রিদের ছিনতাই, পর্যটকদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া, বাসাবাড়িতে ডাকাতি, ভাড়াটিয়া হিসেবে জমি দখল-বেদখল ও অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্ম করছে নুরু। এসব সন্ত্রাসী কর্ম করার কালে বাহিনীর প্রতিজনের হাতে দেয়া হয় আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে, তাদের অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না কেউ। একারণে উল্লেখিত এলাকার প্রায় ৫-৬ হাজার মানুষ এ বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে দিন কাটাচ্ছে।
আরো উল্লেখ করা হয়, পশ্চিম লারপাড়াস্থ মাদক নিরাময় কেন্দ্র নোঙ্গরের পাশে হাকিম আলীর ভাড়া বাসায় থেকে সন্তানদের পড়া-লেখা করাচ্ছেন চট্টগ্রামের দোহাজারির বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসী জাফর আলমের স্ত্রী ছমিরা আকতার (২৫)। স্বামী প্রবাস থেকে টাকা পাঠান এটা জানতে পেরে নুরু তার বাহিনী মারফত ছমিরার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেলে তার সন্তানদের অপহরণ করা হবে বলে হুমকি দেয় নুরু। এসব বিষয় বাসা মালিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের জানানোর অপরাধে মঙ্গলবার সকালে ছমিরার ভাড়া বাসায় গিয়ে তার শ্লীলতাহানি ও ছেলে ইব্রাহিমকে অপহরণের চেষ্টা চালায় নুরু ও তার বাহিনী। তাদের শোর চিৎকারে ছমিরার বড় বোন তৈয়বা বেগম, তার সন্তান মোস্তফা, আয়ূবসহ এগিয়ে এলে তাদের সবাইকে বেদম প্রহার করা হয়। এসময় বাসার ব্যবহার্য পণ্যও ভাংচোর করে তারা। চলে যাবার কালে ছমিরার ২ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, কানের দূল, আংটি লুট করে নিয়ে যায়।
বিষয়টি জানিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দেয়া হয়। ঘটনার পর তারা বাসায় যেতে ভয় পাচ্ছে জানালে এসআই নুরুল হকের নেতৃত্বে পুলিশদল ছমিরার পরিবারকে বাড়িতে দিয়ে আসে।
ছমিরার পরিবার অভিযোগ করে জানান, পুলিশ চলে আসার পর নুরু বাহিনীর লোকজন তাদের বাসার আশে-পাশে এসে গালিগালাজ করছিল।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি আসলাম হোসেন অভিযোগ জেনেছেন উল্লেখ করে বলেন, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, নুরুল ইসলাম নুরু গত বছরের মে মাসে টেকনাফের আনসার ব্যারাকে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল। তার ফোন কল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে সদর থানা পুলিশ তাকে এ ঘটনায় আটকও করেছিল। কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় নুরু সে ঘটনা থেকে বেচে যায়। এর আগে ডিবি পুলিশ তাকে জেল গেইট এলাকা থেকে কাটা বন্দুকসহ আটক করে। এ ঘটনায় দীর্ঘ কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধ কর্মে জড়িত হয়েছে। বর্তমানে সে টেকনাফ ও পাহাড়ি এলাকার অপরাধীদের তাজা কার্তুজ সরবরাহ দিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে থাকে বলেও প্রচার রয়েছে। নীলা এলাকার নিহত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের হয়ে নুরু কাজ করতো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে নুরুল ইসলাম নুরু সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব না হওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।