বিশেষ প্রতিবেদকঃ কাল (মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবারে পূজার জন্য জেলার ২৯৩ টি মন্ডপে দূর্গাপূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে ১৫৯টি ঘট ও ১৩৪টি প্রতিমা। তৈরী করা হয়েছে প্রতিমা সমেত মন্ডপ ও প্যান্ডেল। মঙ্গলবার বেলা ১০ টায় কক্সবাজার শহরের গোলদিঘীর পাড়স্থ ইন্দ্রসেন দুর্গাবাড়ি থেকে জেলার সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। দূর্গাপূজা সুষ্টভাবে সম্পন্ন ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পূঁজায় পটকা-বাজি ফোটানো এবং যেখানে সেখানে রং ছিটানো যাবেনা বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
সনাতন ধর্মালম্বীরা জানান, গত মঙ্গলবার শুভ মহালয়া গেছে। মহালয়ার সাতদিন পর ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে। সে হিসেবে ২৬ সেপ্টেম্বর শুরু হবে মূল অনুষ্ঠানের। তবে মূলত গত ১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) থেকেই কানে অনুরণিত হয়েছে দেবী দুর্গার আগমনধ্বনি। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এদিন থেকে দেবীপক্ষের শুরু। দেবীর আরাধনা সূচিত হয়েছে মহালয়া উদযাপনের মাধ্যমে। মূলত দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনাও শুরু এদিন থেকেই।
হিন্দু ধর্মমতে, মহালয়ায় দেব-দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। এদিন অতি প্রত্যুষে মন্দিরে মন্দিরে চন্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে দেবীকে আহবান করা হয়। ভক্তরা গঙ্গাতীরে তাদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেন।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার নৌকায় চড়ে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। যার ফল শস্যবৃদ্ধি। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন (গমন) ঘোটকে চড়ে।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রণজিত দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এবার জেলায় মোট ২৯৩টি মন্ডবে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে প্রতিমা পূজা ১৩৪টি ও ঘট পূজা হবে ১৫৯টি। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভায় ১১টি প্রতিমা পূজা ও ৬টি ঘট পূজা, সদর উপজেলায় প্রতিমা পূজা ৩২টি ও ঘট পূজা ৩২টি, রামু উপজেলায় ১৯টি প্রতিমা পূজা ও ১০টি ঘট পূজা, চকরিয়া উপজেলায় ৪৪টি প্রতিমা পূজা ৩৭টি ঘট পূজা, পেকুয়া উপজেলায় ৬টি প্রতিমা পূজা ও ঘট পূজা ৭টি, মহেশখালী উপজেলায় ১টি প্রতিমা পূজা ও ঘট পূজা ৩১টি, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১২টি প্রতিমা পূজা ও ঘট পূজা ২৮টি, টেকনাফ উপজেলায় ৫টি প্রতিমা পূজা, ঘট পূজার মন্ডপ নেই ও উখিয়া উপজেলায় ৪টি প্রতিমা পূজা ও ৮টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে ঘট পূজা।
সরেজমিন দেখাযায়, প্রতিটা মন্ডপ এলাকা পূর্বের নিয়মে গুছিয়ে সাজানো হয়েছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে প্রতিমাসহ আশাপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে টানানো হয়েছে তেরপলের সামিয়ানা। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার্থে মন্ডপ সংশ্লিটরা নিজ খরচে জেনারেটর ব্যবস্থা করেছে।
সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা জানান, এবার পূজা মন্ডপের খরচ বেশি হওয়ায় সরকারি বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রতি মন্ডপের জন্য ২ মে.টন বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুরো জেলার জন্য পাওয়া গেছে মাত্র ১৪৬ দশমিক ৫ মে. টন চাউল। যা আশানুরূপ হয়নি। এরপরও আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটা মন্ডপে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে।
এদিকে সুষ্ঠুভাবে শারদীয় দূর্গোৎসব সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আর শারদীয় দূর্গাপুঁজা বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। এখানে সব ধর্মের মানুষের বন্ধন এতই মধুর যে অন্যকোন দেশে এটি দেখা যায় না।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, পূঁজাকালীন আযানের সময় সকল মন্ডপের মাইক বা সাউন্ড বন্ধ থাকবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপ গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। তবে নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে এবারে বিসর্জনের সময়ে সাগরে মহিলা ও শিশুদের সাগরে নামতে দেয়া হবে না।
দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সকল পেশার মানুষের সহযোগিতার চেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় জেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা। সেখানেও পূর্বের মতো সবার অনুষ্ঠান হিসেবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সব ধর্মের দায়িত্বশীলরা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা আরো জানান, এ বছরের দুর্গাপূজার নির্ঘন্ট অনুযায়ী ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করবে। ২৭ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহা অষ্টমী ও কুমারী পূজা এবং ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের দুর্গোৎসব।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মূখপাত্র আফরোজুল হক টুটুল বলেন, প্রতিটা মন্ডপে পর্যাপ্ত প্রহরা থাকবে। পুলিশ-আনসারের সার্বক্ষনিক পাহারার পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির ভ্রাম্যমান টহল থাকবে। কেউ কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখী করা হবে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।