বিএনপির রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি খুব শিগগিরই ঘোষণা করতে যাচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। আর এ কারণে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরাও দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। নেতাদের বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন, নিজেদের আমলনামার ফিরিস্তি তুলে তদবির করছেন। আবার সুবিধাবাদী ছাত্র নেতারাও সিন্ডিকেটের উপর ভর করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, দুই বছর মেয়াদি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৪ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
বিএনপির আন্দোলনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে একাট্টা হয়েছেন সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
তারা দলের নীতিনির্ধারক সহ দলে প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের কাছে নতুন কমিটি গঠনের জন্য ধরনাও দিয়েছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবি খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমনকি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের কাছেও সংগঠনটির নেতাকর্মীরা যান। তারা দলের স্বার্থে নতুন কমিটি গঠনের তাগাদ দেয়াসহ এর গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের এমন ধরনার কারনে ওইসকল নেতৃবৃন্দও আশ্বাস দেন।
এ সকল নেতাদের মধ্যে একজন জানান, এবারের মতো এত নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা আগে কখনো ছিলো না। যে ছাত্রটি মেধায়, দক্ষতায় কর্মী হবারও যোগ্যতা রাখেন না সেও এবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সুপার ফাইভে থাকতে চাচ্ছেন। একটি রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা ভালো। কিন্তু যার যোগ্যতা নাই, রাজনৈতিক দক্ষতা নাই সে কিভাবে নেতা হবেন। তিনি বলেন, অনেক ছাত্রনেতা রাজনৈতিক শিক্ষা পর্যন্ত গ্রহণ করেন না। অনেকে তো বিএনপির ১৯ দফা কর্মসূচিও জানেন না। এরপরও দৌড়ঝাপ করছেন, যোগ্যদের জন্য বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছেন। এসবের মধ্যেও সংগঠনের পরবর্তি কমিটি নিয়ে কাজ চলছে। খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। জটিলতার মধ্যেও কমিটি গঠন হবে বলেও তিনি আশাবাদী।
আরেকজন নেতা বলেন, একমাত্র ছাত্রদল কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এখানে অন্য কোনো নেতাদের তেমন ভূমিকা থাকে না। তবে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। যা ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে বলেই জানি। এখন হয়তো অরেকটু ভিন্ন আঙ্গিকে পূনর্মূল্যায়ন করে কমিটি গঠন কাজ সম্পন্ন করবেন। এ জন্য হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবে তা ঘঁষা-মাজার জন্য।
এদিকে কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এমন সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে দৌড়ঝাপও বেড়ে গেছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এসব বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশী একজন ছাত্রনেতা জানান, বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের আন্দোলনে সফলতার দাবিদার হলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একজন ছাত্রনেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলেও কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর অরাজনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও সরব ভূমিকা পালন করতে পারেনি সংগঠনটি। আমরা সারাদেশে ছাত্রদলের ব্যানারে ভিন্ন কিছু করতে পারি নাই। সংগঠনের এসকল ব্যর্থতার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিসহ দলটির নেতাদের খবরদারিকে দায়ি করে তিনি বলেন, বিগত আন্দোলনকে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে নেতৃত্ব বাছাই করা হলে আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে। কিন্তু তল্পিবাহক আর সিন্ডিকেট নির্ভর কমিটি দেয়া হলে হতাশা ছাড়া আর কিছু হবে না।
আরেকজন ছাত্রনেতা বলেন, বিএনপির মধ্যে একমাত্র ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় ঘনিয়ে আসলেই সিনিয়র-জুনিয়র, বিবাহিত-অবিবাহিত, সংস্কারপন্থি আর আঞ্চলিকতার অজুহাত সামনে তুলে আনেন এক শ্রেণির তল্পীবাহক। তারা নিজেদের আজ্ঞাবাহ কমিটি গঠনের জন্যই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের খোলস পরিবর্তন করেন। আর ওই সকল যুক্তি সামনে তুলে এনে যোগ্যদেরকে আড়াল করে দেন।
আগামী কমিটিতে শীর্ষ পদে যারা বেশি আলোচনায় আছেন তারা হলেন- সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু অন্যতম। সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারও রয়েছেন। এছাড়া যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে মিয়া রাসেল, কাজী মোকতার হোসেন, ওমর ফারুক মুন্না প্রমুখ। এদের মধ্যে সকলেই রাজপথে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে স্বাক্ষর রেখেছেন।
এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন- যুগ্ম সম্পাদক করিম সরকার, মির্জা ইয়াসিন আলি, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া প্রমুখ। অন্যরাও নিজেদের মতো করে সিনিয়র নেতাদের কাছে গিয়ে লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র-পূর্বপশ্চিম
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।