ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট নাগাদ বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ চলবে বলে সূত্রে জানা গেছে। বুধবার (২১ জুন) কমিশন সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ইসির পক্ষ থেকে হালনাগাদের সময়সূচি ঘোষণা করা হবে। হালনাগাদে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকাই ব্যয় হবে প্রশিক্ষণ কাজে।
জানা গেছে, পরিকল্পনা থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিতর্ক এড়াতে ১৮ বছরের কম বয়সী নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১০-১৭ বছর বয়সী নাগরিকদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি ইসিতে আগেই আলোচনা হয়েছিল। ফলে এখন শুধু যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য সেসব নাগরিকদের তথ্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করবে কমিশন।
এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর বা এর বেশি হবে, ভোটার তালিকাভুক্ত করতে সংগ্রহ করা হবে তাদের তথ্য। পাশাপাশি আগেই ভোটার হওয়ার যোগ্য হলেও কোনও কারণে বাদ পড়লে তাদের তথ্য নেওয়া হবে।
জানা গেছে, হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের পর ২০ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত নাগরিকদের নিবন্ধন চলবে। এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করা হবে। এতে নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি, মৃত ভোটারদের নাম কর্তন ও ভোটার স্থানান্তর করা হবে। তবে কবে ও কীভাবে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কমিশন সভায়।’ ১৮ বছরের কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক (গণসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, বুধবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়টি কমিশন বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে এদিনই হালনাগাদের সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সঙ্গে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে যুক্তি দেখানো হয়, ২০১৫ সালে একই সঙ্গে ১৫-১৭ বছর বয়সীদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। ওই সময়ে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের পহেলা জানুয়ারি সময়ের মধ্যে জন্ম নেওয়াদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব নাগরিকদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাদের ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
এ হিসাবে ১৯৯৮ সালের পহেলা জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম হয়েছে, তারা ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আর যাদের জন্ম ১৯৯৯ সালের পহেলা জানুয়ারি তাদের ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নাম প্রকাশিত হয়েছে।
অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন— জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০-এর ৫(২) অনুযায়ী, ভোটার নয় এমন নাগরিককে নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তসাপেক্ষে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে পারবে। এ হিসেবে সব বয়সীদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ ও তাদের কার্ড দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের। এ কাজ করতে হবে নির্বাচন কমিশনের অধিভুক্ত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগকেই।
ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ১৮ বছরের কম বয়সীরা নানান ধরনের সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছে। বিশেষ করে মোবাইল সিম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে তারা। এসব দিক বিবেচনা করে ২০০৮ সালের পহেলা জানুয়ারি যাদের জন্ম তাদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ প্রস্তাবে আপত্তি জানান একজন নির্বাচন কমিশনার। তিনি সভায় বলেন, ‘১৮ বছরের কম বয়সীদের নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করা হলে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হতে পারে। কেউ কেউ কমিশনকে সন্দেহ করতে পারেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২১ জুন) অনুষ্ঠেয় কমিশন সভায় ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের তথ্য সংগ্রহের প্রস্তাব উঠছে। কমিশন সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, যাদের জন্ম ২০০০ সালের পহেলা জানুয়ারি অথবা তার আগে তাদের তথ্য সংগ্রহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৫ জুলাই থেকে তিন ধাপে এ কার্যক্রম চলবে। ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে ভোটার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর তিন ধাপে সম্পন্ন হবে নিবন্ধন কাজ। প্রথম ধাপে ১৮৩টি উপজেলা ও থানা, দ্বিতীয় ধাপে ২১৬টি উপজেলা ও থানা এবং তৃতীয় ধাপে ১১৮টি উপজেলা ও থানায় এ কাজ করা হবে। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি এই ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ কার্যক্রমের সময় যারা আবাসস্থল পরিবর্তন করেছেন কিন্তু ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেননি তাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া রোহিঙ্গারাও যেন ভোটার হতে পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কার্যপত্রে।
ভোটার হালনাগাদের প্রস্তাবিত বাজেটের (৫০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৬ টাকা) ১০ শতাংশই অর্থাৎ ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ টাকা ব্যয় করা হবে প্রশিক্ষণে। এছাড়া ফরম, রেজিস্টার ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি মুদ্রণ খাতে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা, যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা, প্রচারণা খাতে ৭ কোটি ২০ লাখ ২১ হাজার টাকা, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের সম্মানী ৯ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ টাকা ধরা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।