২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬


শিরোনাম
  ●  টেকনাফ সমুদ্রে গোসলে নেমে মাদ্রাসার এক ছাত্রের মৃত্যু দুই ছাত্র নিখোঁজ।   ●  মাকে হত্যার পর থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ।   ●  মারমেইড বীচ রিসোর্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান   ●  যারা খেলাধূলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না   ●  উখিয়ার নতুন ইউএনও কামরুল হাসান চৌধুরী   ●  উখিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে শক্তিশালী গ্রেনেড উদ্ধার   ●  ছয় কোটি তরুণের দেয়াল লিখন বাংলাদেশের নতুন সংবিধান   ●  চকরিয়ায় ২টি ডাম্পার ট্রাক ও এক্সকেভেটর জব্দ   ●  ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ বাংলাদেশী  জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি   ●  মেরিন ড্রাইভে ইয়াবাসহ নারী আটক

শেষ হল অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেওয়া নাগরিকদের শুমারি শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক একটি নির্দিষ্ট ‘তথ্যভান্ডার’ এর আওতায় এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশে দ্বিতীয়বারের মত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিকদের শুমারি হলো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার এই শুমারি করার কথা থাকলেও পরে সময়সীমা দুইদিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মূল শুমারি শুরু হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী। এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত খানা গণনার কাজ চলে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান জানিয়েছেন, গত রোববার শেষ দিনের মতো শুমারির কাজ চলে জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালী এবং টেকনাফ উপজেলা নয়াপাড়া ও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তিতে। এবারের শুমারিতে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি প্রথম শুমারিতে বাদ যাওয়া রোহিঙ্গাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কক্সবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলা যথাক্রমে উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু ও চকরিয়ায় শুমারি চলে। এছাড়াও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, চন্দনাইশ,পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় এই শুমারি হয়েছে।
সর্বশেষ শুমারিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল মিয়ানমার নাগরিককে শুমারির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কিনাÑএমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এখানে অবস্থান করা সকল মিয়ানমারের নাগরিকই শুমারির আওতায় এসেছে। তবে কোন মিয়ানমার নাগরিক যদি অন্যত্র লুকিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই। তার বাদ যেতেই পারে। আমার লক্ষ্য ছিল শতভাগ মিয়ানমার নাগরিককে শুমারির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট তথ্যভান্ডারের আওতায় আনা।’
তিনি বলেন, ‘শুমারি জন্য কক্সবাজার জেলায় ৪০০ জন গণনাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের প্রশিক্ষনও দেওয়া হয়েছে। তারা ২০০টি দলে ভাগ হয়ে এই ক’দিন কাজ করেছেন। প্রতিটি দলে ছিলেন একজন সুপারভাইজার ও একজন গণনাকারী।’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১, ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণনাকারী সাইফুল ইসলাম সাকের বলেন, ‘আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মিয়ানমার নাগরিকদের গণনার কাজ শনিবার শেষ হয়েছে । ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শুমারির কাজ করেছি ২ নম্বর ওয়ার্ডের আধারী পাড়া, মুলাপাড়া ও উত্তরপাড়া গ্রামে। শুমারির মাধ্যমে প্রাপ্ত সকল তথ্য-উপাত্থের নথি আজ (গতকাল) জেলা পরিসংখ্যান অফিসে জমা দিয়ে বাড়ি ফিরেছি।’
প্রসঙ্গত, বিগত ২০১৬ সালে দেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের (মিয়ানমারের নাগরিক) সংখ্যা নির্ণয় করতে প্রথমবারের মতো শুমারি করার উদ্যোগ নেয় সরকার। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলায় এই শুমারি চলে। ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক শুমারি ২০১৬’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ওই শুমারির ফলাফল এখনো পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।
গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সেনা ছাউনীতে সন্ত্রাসী হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস দমন-পীড়ন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে হাজারো রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা বলছে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার পর বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবিক চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বাংলাদেশের প্রতি অব্যাহত অনুরোধ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিগত ২০১৪ সালে মন্ত্রিপরিষদে ‘মিয়ানমার নাগরিক-সম্পর্কিত জাতীয় কৌশলপত্র’ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে কৌশলপত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের সভায় মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিকদের তথ্যভান্ডার প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।