মে আন্তর্জাতিকশ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বের ১৮৫টি দেশ এই দিবস পালন করছে। সারাবিশ্বের মতো এইদিন বাংলাদেশেও সরকারি সাধারণ ছুটি।আদিকাল থেকেই শ্রমিকরা অবহেলিত ও নির্যাতিত। শ্রমিকরা তাদের দাবি ও অধিকার আদায় করতে সবসময়ই বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করছিল। ১৮৮৬ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় হেমার্কেট স্কয়ারে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করে। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভে পুলিশ বাধা দিলে ফুঁসে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় এক বিক্ষোভকারী বোমা বিস্ফোরণ করে। পুলিশও পাল্টা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।
ওই সংঘর্ষে ৪ বিক্ষোভকারী ও ৭ পুলিশ নিহত হয়। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের পর শ্রমিকদের কাজ করার মানবিক কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। মূলত ওই দিনই মে দিবসের সূত্রপাত।
সংঘর্ষের ঘটনা ৪ মে ঘটলেও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ১ মে-কে বেছে নেওয়া হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সভায় (ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেস) মেহনতি মানুষের সংহতি এবং শ্রেণী সংগ্রামের প্রতীকী দিবস হিসেবে পয়লা মেকে ‘মে দিবস’ বা শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায় মে দিবস।
পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক পরাশক্তি রাশিয়া ও আরও কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার পর মে দিবস বা শ্রমিক দিবস বিশেষ তাৎপর্য লাভ করে। শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভার্সাই চুক্তি (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে দেশগুলোর মধ্যে সমাঝোতা চুক্তি) অনুযায়ী ১৯১৯ সালের ১১ এপ্রিল গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও। সারাবিশ্বে শ্রমিকদের অধিকার আদায় এবং প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে সংস্থাটির একটি আবাসিক কার্যালয় রয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি মালিকদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য আইএলও বেশকিছু নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করে। যা শ্রমিক-মালিক সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ করা হয়। ১৯১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বৈশ্বিক অভিভাবক জাতিসংঘ ১৯৪৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন বা আইএলও-কে সহায়ক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯২০ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির সদর দফতর স্থাপন করা হয়। ফ্রান্সের আলবার্ট টমাস আইএলও’র প্রথম পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও’র নীতি মেনে চলার জন্য সংস্থাটির নীতিমালায় স্বাক্ষর করে।
আইএলও থেকে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার সংরক্ষণের জন্য সংস্থাটির মনোনীত ব্যক্তিরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে বিশ্বে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শান্তি, প্রগতি এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। আইএলও ৪টি কৌশলগত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। এগুলো হচ্ছে, কর্ম পরিবেশের মান নিশ্চিত করা। সবশ্রেণীর শ্রমিকের জন্য সম-সুযোগ ও সম-মজুরি বা ন্যায়তা নিশ্চিত করা। সব শ্রমিকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ত্রিপক্ষীয় (সরকার-শ্রমিক-মালিক) এবং সামাজিক সংলাপ শক্তিশালী করা।
আইএলও’র উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৮৫টি দেশে জেনেভা থেকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিটি দেশে কাজের ক্ষেত্রে মূলত ৪টি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকে আইএলও। এগুলো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম পরিবেশের উন্নয়ন এবং শ্রমিকের জন্য কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে কাজ করে। সরাসরি তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শ্রম আইন প্রতিষ্ঠা করে আইএলও। শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে প্রতিটি দেশকে কারিগরি সহায়তা করে থাকে আইএলও। শ্রমিকদের জন্য দেশে দেশে আইএলও শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার ব্যবস্থা করে থাকে।
মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারেও সমাবেশ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
এই ওয়েব সাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।