তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন। সমালোচনা আমাদের দৃষ্টিকে আরও প্রসারিত করে।
বুধবার (০১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত ইফতারে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই সংবাদমাধ্যম আরও শক্তিশালী হোক। আমরা সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। আমি শুধু চাই আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন।
সংবাদমাধ্যমে নীতিমালার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কিছু করতে গেলে নীতিমালা প্রয়োজন। শৃঙ্খলার জন্যই নীতিমালা প্রয়োজন। প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজনীতির নামে আগুন দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা কোনো রাজনীতি নয়। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, চোরাচালান, মাদকের বিরুদ্ধেও সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে বলেন তিনি।
সাংবাদিকরা দাবি করেন তাদের আবাসন সুবিধা এবং কল্যাণ ট্রাস্টে অর্থ বাড়ানোর বিষয়ে। এর প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন হয় না। কল্যাণ ট্রাস্টের চিন্তা করতে হয়নি, আমি নিজস্ব চিন্তা থেকেই করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সব সময় সাংবাদিকদের কথা চিন্তা করে, আর সাংবাদিকরা বেশি করে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে। অবশ্য সমালোচনা ভালো এটা আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে।
প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ ট্রাস্টের তহবিলে সংবাদমাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকদেরও টাকা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, চাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। সবাই এ তহবিলে কিছু কিছু টাকা দিলে এটাকে আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রেসক্লাবকে আন্তর্জাতিক মানের প্রেসক্লাব করার উদ্যোগ নিতে বলেন। এ জন্য যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন তিনি সব দেবেন বলেও জানান।
এ সময় দেশের উন্নয়নে সরকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে উন্নতরাষ্ট্রে পরিণত করা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমরা যখনই ক্ষমতায় এসেছি তখনই আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। আমরা দারিদ্র্য কমিয়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্য মানুষের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আমরা চলতে চাই না। বাংলাদেশের সম্মানে আঘাত করে কেউ কিছু বললে আমার সহ্য হয় না। দেশে মানুষ হত্যার রাজনীতি যারা করতে চায়, তাদের আর এসব করতে দেওয়া যাবে না। মানুষ পুড়িয়ে কেউ কোনো দিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
ইফতারের বেশ খানিকক্ষণ আগেই তিনি সেখানে উপস্থিত হন এবং সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর। ইফতারের আগে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করা হয়।
বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিইউজের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, আবদুল জলির ভূইয়া ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিইউজের মহাসচিব কুদ্দুস আফ্রাদ।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিরোধীদলীয় নেতারা, কূটনীতিক, সংসদ সদস্য, সাংবাদিকসহ ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।